আধুনিক সমাজ সৌন্দর্য প্রিয়। আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে সমতার কথা বলা হলেও সমাজের বিভিন্ন স্তরে আজও কর্ম দক্ষতার নয় সৌন্দর্য ই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে গিয়েই এক উন্নততর সমাজের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বছর ২৫ এর কান্যা সেসর। জন্ম থেকে দুই পা নেই তার। তবু থেমে থাকতে চাননি তিনি। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাওয়ার ইচ্ছা ও তার মনোবলের জোরেই সমস্ত বাধা পার করে সুপার মডেল হয়ে চমকে দিয়েছেন গোটা বিশ্বকে।

কান্যা সেসরের জন্ম থাইল্যান্ডে। একদিকে মেয়ে সন্তান অপরদিকে তার পা নেই, সেসরের জন্মের পরই এ নিয়ে বাবা-মায়ের দুঃশ্চিন্তার ভেঙে পড়েন তার মা বাবা। মাত্র ৭ দিন বয়সী পঙ্গু মেয়েকে একটি বুদ্ধ মন্দিরের পাশের রাস্তায় ফেলে চলে যান তার নিষ্ঠুর বাবা-মা। এরপর শিশু সেসরের ঠিকানা হয় সরকারি অনাথ আশ্রমে। সেখান থেকেই তাকে দত্তক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান জিমি ও মারিয়ান সেসর নামের এক দম্পতি। সন্তান স্নেহে বড় করেন বিকলাঙ্গ মেয়েকে।

কান্যা আজ বিভিন্ন পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সুপরিচিত মডেল। তবে নিজের প্রতিবন্ধকতার জন্য একটুও দুঃখ নেই সেসরের। কান্যা বলেন, “নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য আমার পায়ের দরকার নেই। আমি সবাইকে দেখাতে ভালোবাসি যে সৌন্দর্য কেমন হতে পারে। ছোট থেকেই বহু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে সব সময় পাশে মা-বাবাকে পেয়েছি। বর্তমানে আমার আয় শুধু বিজ্ঞাপন থেকেই মাসে প্রায় ৬০ হাজার ডলার ( ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৫০ লাখ টাকা)।”

মডেলিংয়ের পাশাপাশি স্কেটিং খেলাতেও দক্ষ কান্যা সেসর। তার জীবনের অন্যতম একটি স্বপ্ন, তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য আয়োজিত প্যারা-অলিম্পিকে অংশ নিতে চান। পরবর্তী প্যারা-অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন কান্যা। তাঁর এই হার না মানার গল্প নিয়ে তিন পর্বের একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ফক্স নিউজ। সময়ের সাথে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বহু সুযোগ তৈরী করা হলেও, সমাজের মূল স্রোত থেকে আজও তারা বেশ খানিকটা পিছিয়ে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ভেদাভেদ মুছে দিতে। তবেই সেসরের মত প্রতিভারা সমাজের সামনে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে।
তথ্য ও চিত্র ঋণ – The Independent







































Discussion about this post