গ্রামবাংলার কুয়াশায় মোড়া শীতের সকাল! মেঠো পথের দুই পাশে একের পর এক খেজুর গাছ। সেই সঙ্গে খেজুরের কাঁচা রসের মিঠে গন্ধে চারদিকটা যেন ম ম করছে। কারণ এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডাতেও সেসব গাছে ঝুলে থাকা রসের হাঁড়িগুলো নামিয়ে আনতে ব্যস্ত গাছিরা। শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সমস্ত গাছিরা- এই দৃশ্য হল গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত এক দৃশ্য। এই দৃশ্যের ব্যতিক্রম ঘটে না কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াতেও। আর সেই সঙ্গে প্রচণ্ড শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে টাটকা রসের স্বাদের লোভে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন এই জায়গায়।
আমরা সকলেই জানি গ্রাম বাংলায় শীতের সঙ্গে খেজুর রসের সম্পর্ক ঠিক কতটা নিবিড়৷ তাই এই শীতে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসছেন খেজুর রস খেতে। শীত এলেই তাই গাছিদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। সংগ্রহ আর বিক্রির বাড়বাড়ন্তে তাই তাদের মুখেও ফুটে উঠছে রসালো হাসি। পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দি ও হোসেন্দি ইউনিয়নে ছোট-বড় ৮৫টি গাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ কেজি খেজুর রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাই চাহিদা বেশি হওয়ায় বেলা বাড়লেই অনেকে পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত রস। সেই কারণে বেশ ভোর থাকতেই ক্রেতাদের ভিড় জমছে খেজুর বাগানে।
ক্রেতাদের অনেকেই জানান, বেশ দূরদূরান্ত থেকে তারা ঠান্ডা উপেক্ষা করেও এসেছেন তাজা রসের স্বাদ নিতে। অনেকের মতে দল বেঁধে টাকটা রস পান করতে আসা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হল বেশ দূর থেকে এসেও অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেও যাচ্ছেন। এবিষয়ে বিক্রেতারা জানান, চাহিদা বেশি থাকলেও গাছের সংখ্যা বেশ কম। খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়ানো গেলে চাহিদা মেটানো সহজ হত। তবে এ বছর যে দাম, তাতে বেশ লাভবান হওয়ার আশা রাখছেন তারা।
ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য অবশ্য ভবিষ্যতে বিভিন্ন সড়কের পাশে আরও খেজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। স্থানীয় প্রচেষ্টার সঙ্গে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খেজুর রসের এই ব্যবসায় আরও উন্নতি হতে পারে বলেও তারা আশাবাদী।
চিত্র ঋণ – সাজেদ রহমান
Discussion about this post