পৃথিবীর মধ্যেই স্বর্গের খোঁজ পেতে চান? তবে এই স্বর্গে দেবদেবীর দেখা না পেলেও, মন প্রাণ ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখতে পাবেন অবশ্যই। ভ্রমণবিলাসীদের কাছে প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যই তো স্বর্গসম। এই মর্ত্য ভূমিতেই রয়েছে স্বর্গের সিঁড়িও। অবাক হচ্ছেন তো? হ্যাঁ, এই সিঁড়ি মর্ত্যভূমি পেরিয়ে উঠে গেছে সোজা উপর দিকে। পাহাড় আর জঙ্গল ভেদ করে ওঠা এই সিঁড়ির শেষ দেখা যায় না। নাম হাতিমাথা স্বর্গের সিঁড়ি। অনেকের কাছেই এই নাম বেশ অজানা। পঞ্চাশটা নয় একশোটা নয়, একেবারে তিনশো সিঁড়ি পেরিয়ে দেখা মেলে প্রকৃতিরূপী এই স্বর্গের। কিন্তু আছে কোথায় এই স্বর্গ?
ত্রিপুরার খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের মায়ুং কপাল পাড়ায় স্বর্গের সিঁড়ির অবস্থান। এই পাহাড়ের আরেক নাম হল হাতিমুড়া। যার উচ্চতা ১ হাজার ২০৮ ফুট, যার প্রায় ৯০০ ফুট পথ উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তা আর বাকি ৩০৮ ফুট জুড়ে রয়েছে স্বর্গের সিঁড়ি। আনুমানিক ১১০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলের ৩০০ সিঁড়ি আছে সেখানে। এই সিঁড়িগুলো পেরিয়ে উঠতে হয় হাতিমাথা পাহাড়ের চূড়ায়। বিশালাকৃতি এই পাহাড়ের সামনের দিকটা একেবারে যেন হাতির মাথার অবয়ব, তাই স্থানীয়রা এই পাহাড়ের নাম দিয়েছেন হাতিমুড়া বা হাতিমাথা। পাহাড়ে বসবাসকারী ত্রিপুরিরা এ পাহাড়ের নামকরণ করে ‘মাইয়োং কপা’। আবার চাকমারা এই পাহাড়কে ‘এদো শিরে মোন’ নামেই জানে। চাকমা ও ত্রিপুরি ভাষায় এ শব্দ দুটির মানে হলো ‘হাতির মাথা পাহাড়’। তবে স্থানীয়রা যে নামেই ডাকুক না কেন, পর্যটকদের কাছে এই পাহাড় ‘স্বর্গের সিঁড়ি’ই বটে!
পাহাড়ের গা বেয়ে কেন তৈরী হয়েছে এই সিঁড়ি? আসল কথা হল, হাতিমাথা পাহাড় পার করে রয়েছে স্থানীয় আদিবাসীদের গ্রাম। সিঁড়ি তৈরি হওয়ার আগে এই খাড়া পথটাই ছিল তাদের যাতায়াতের মাধ্যম। এমনকি গাছের গুঁড়ি নিয়েও যাতায়াত করতে হত এই পথ দিয়েই। তাদের কষ্ট লাঘব করতেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ২০১৫ সালে এ সিঁড়ি নির্মাণ করে দেয়। বর্তমানে যাতায়াতের পথ হিসেবে প্রায় ১৫টি আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দা এ সিঁড়ি ব্যবহার করছে। তবে মজার বিষয় হল স্থানীয়দের সুবিধার্থে এ সিঁড়ি তৈরী হলেও এখন পর্যটকদের বিশেষত পাহাড়ি ট্রেকিং যাদের প্রিয়, তাদের কাছে এই স্বর্গের সিঁড়ি এখন এক বিরাট আকর্ষণ। দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন অ্যাডভেঞ্চারের লোভে।
স্বর্গের সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ের উপরে উঠলে খাগড়াছড়ির সুউচ্চ সব সারি সারি পাহাড়ের সৌন্দর্য্য, একেবারে যেন কল্পনারাজ্য। পাহাড়ের চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় খাগড়াছড়ি শহর। চারিদিকে সবুজের হাতছানি, হিমেল হাওয়া আর তার সাথে পাখিদের কলতান – সব মিলিয়ে যেন এক অন্য পৃথিবী!
Discussion about this post