পোষ্যদের মধ্যে কুকুর যে প্রভুভক্ত একথা কে না জানে! তবে সে ভক্তির, প্রভুর প্রতি ভালোবাসার গ্রাফ কতটা উঠতে পারে তার অসামান্য উদাহরণ হল বব্বি। যাকে বলা হয় ‘বিস্ময়কর কুকুর।’ ব্রেইজার পরিবারের এই কুকুরটি জাতে ছিল স্কচ কোলি। ১৯২৩ সালে ব্রেইজার পরিবারের সঙ্গে গরমের ছুটিতে সে আসে ইন্ডিয়ানা স্টেটের ওয়ালকোট শহরে। আর তারপরেই সেই বিপত্তি।
ফ্র্যাঙ্ক এবং এলিজাবেথের ছোট্ট দু’বছরের পোষ্য হারিয়ে যায় হঠাৎ করেই। ছুটিতে ঘুরতে গিয়েই এই ঘটনা। প্রচুর খোঁজাখুঁজি করেও কোথাও পাওয়া যায় না বব্বিকে। যাকে নিয়ে সময় কেটে যেতো ব্রেইজার দম্পতির দুই কন্যা লিওনা আর নোভার। এই বব্বির জন্য খবরের কাগজে নিখোঁজ হবার বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তবু কোনো খোঁজ মেলে না তার।
ঠিক এরপর ছয় মাসের মাথায় ঘটে অবিশ্বাস্য সেই ঘটনা। হাজার হাজার মাইলের সুদীর্ঘ যাত্রা করে বব্বি এসে পৌঁছায় তার মালিকের কাছে। জানা যায় প্রায় ২৫৫১ মাইল পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়। আর সে পথের নানান বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে নিজের গন্তব্যের পথ চিনে অবশেষে সে ফিরে আসে। দিনটা ছিল ১৯২৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি। নোভা বব্বিকে দেখে চিৎকার করে ওঠে প্রথমে। এ যেন আত্মিক মেলবন্ধনে আনন্দের প্রকাশ। বব্বিকে নিয়ে এরপর চারিদিকে আলোড়ন পরে যায়।
‘রিপ্লেস বিলিভ ইট অর নট’ বইটিতে স্থান পায় বব্বির এই মহাকাব্যিক যাত্রা। প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষের ভিড় উপচে পড়ে এই কুকুরটির দর্শন পাবার জন্য। ‘দ্যা কল অফ দ্য ওয়েস্ট’ নামক একটি নির্বাক ছবিতে রীতিমত অভিনয় করে এই সারমেয়টি। মহাভারতের যুগ থেকে হাল আমলের যুগ। কুকুরের যাত্রার এক আলাদাই ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায়। দীর্ঘ ছ মাসের যাত্রার পর ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছিল বব্বি। তার চিকিৎসা করা হলেও বেশিদিন টিকে থাকেনি তার জীবনকাল। ১৯২৭ সালে বব্বি মারা যায়। অরিগন হিউম্যান সোসাইটির পোষা প্রাণীদের জন্য নির্মিত সিমেট্রিতে তাকে কবর দেওয়া হয়।
Discussion about this post