শেষ পাতে দই হলে তবে বাঙালির রসনাতৃপ্তি ঘটে। দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে দই যে একেবারে প্রথম সারিতে সে কথা বলাই বাহুল্য। কারোর কাছে দই মানেই সাদা ধবধবে টক দই, কারোর কাছে আবার স্নিগ্ধ মিষ্টি দই। তবে দই প্রেমীদের অনেকেরই হয়তো এ দইয়ের ঠিকানা অজানা। ভাঁড় বা হাঁড়ি ছেড়ে দই পাতা হয় ঝুড়িতে। এই ব্যতিক্রমী দইয়ের একমাত্র ঠিকানা হল মুর্শিদাবাদ।
ঝুড়ির ফাঁককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি সেখানে জায়গা দখল করেছে দই। মুর্শিদাবাদ দৌলতপুরের হরিশপুর অঞ্চলের ঝুড়ি দই বাংলায় প্রসিদ্ধ। স্বাদ আর গুণগত মানে নিজের জায়গা রীতিমত পাকা করে নিয়েছে এই দই। এই দইয়ের বৈশিষ্ট্য হল, বাঁশের কঞ্চির ছোটো ঝুড়ির গায়ে দইয়ের শক্ত সাজা বা ক্ষীরের প্রলেপ মাখিয়ে দিয়ে ছিদ্রগুলি বন্ধ করে সেই ঝুড়িতে পাতা হয় দই। এই দইয়ের উপরে পুরু ঘিয়ে রঙের আস্তরণ থাকে। আর তা সরিয়ে ফেললেই রহস্য উন্মোচন। মিলবে সাদা রঙের দই। স্বাদে হালকা টক হালকা মিষ্টি। জিভে দিলেই এক মিশ্র অনুভূতি।
হরিশপুরের বিখ্যাত দই ব্যবসায়ী গৌতম ঘোষ বংশ পরম্পরায় চালিয়ে আসছেন দই এর ব্যবসা। শোনা যায়, তার বাবা এই দই বিক্রি করে সোনার মেডেল পেয়েছিলেন। ১৯৫৩-৫৪ সালে বিধানচন্দ্র রায় যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, দই খেয়ে তার বাবাকে পুরস্কৃত করেছিলেন। একসময়ে এখানে পাতা হতো ক্ষীরের দই। ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা ঝুড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কারিগররা এই দইয়ের রেসিপি ফাঁস করেন না।
দই এমনই এক সুস্বাদু খাবার যা মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। তবে বর্তমানে দুধ, চিনি ইত্যাদির দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এই দই এর ওপর। তবুও এর চাহিদার তাগিদে ব্যবসার হাল খুব খারাপ নয়। কলকাতার বিভিন্ন ব্যবসায়ীও ঝুড়ি দই বিক্রি করেন আজকাল। তবে আসল নকলের ফারাক তো চিরকাল থাকবেই! তাই ঝুড়ি দইয়ের আসল স্বাদ নিতে হলে আপনাকে আসতেই হবে মুর্শিদাবাদের হরিশপুর।
Discussion about this post