বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে। কিছু হয় ঘরোয়া আচারের বাহুল্যে। কিছু আবার সর্বজনীন। সেসমস্ত সর্বজনীন পূজার অন্যতম উপকরণ হল প্যান্ডেল। অতীতে অস্থায়ী বাঁশের ছাউনি আর কাপড়ের ভাঁজেই তৈরি হতো তা। এখন দুর্গাপুজো হোক বা কালী,জগদ্ধাত্রী!থিমের লড়াই লেগে থাকে সর্বত্র। দুর্গাপুজো বাঙালির সবচেয়ে বড়ো উৎসব। টিভির পর্দা থেকে চামড়ার চোখ! সব ঢেকে যায় সেরা থিমের বহর দেখে দেখে। পুরস্কারের পর পুরস্কার। আমরা দেখে রাখি আয়োজক সংস্থার নাম। দেখি বাজেটের অঙ্ক। যা দেখিনা তা শিল্পীর শ্রম। শিল্পের উৎপত্তিস্থল। এহেন থিম গড়ে ওঠার পেছনে যে আছে কতখানি শ্রম! কতখানি দক্ষতায় যে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিবিলাস! কত কত মানুষ যে প্যান্ডেল শিল্পের উপর রুটি রুজির নির্ভরতায়! তা জানতে যেতেই হবে কাঁথি।
প্রথম সারির প্যান্ডেল প্রস্তুতিতে বরাবর খ্যাতির চূড়ায় রয়েছে কাঁথি। যেহেতু দুর্গাপুজোয় আসে সবচেয়ে বড় প্যান্ডেলের বরাত! বর্ষার মধ্যভাগ থেকেই তাই চলে জোরকদম প্রস্তুতি।শহরের বিভিন্ন প্রান্ত মেতে ওঠে প্যান্ডেল বানানোর আনন্দে। শনি মন্দির চত্ত্বর, দইসাই, রাজাবাজার ও পটাশপুরে আছে প্যান্ডেলের বিশাল ব্যবসা। কাঁথির অলিগলি তাই পুজোর গন্ধে মাতে বেশ অনেকদিন আগে থেকেই।
কত বেকার যুবক যুবতীদের যে এ পেশায় কর্মসংস্থান হয়! উদ্যোক্তাদের কথামতো তারা শিল্প বোনে প্যান্ডেলের কাপড়ে। কখনও বাঁশ, বেত আবার কখনও কাঠের উপর নকশা কাটে ওরা। প্রতিদিনের বেতন তিনশো টাকা। পাঁচ মাসের এই রোজগারেই চলে বচ্ছরকার খরচা। ঝুরিয়া, জুনপুকুর, চন্দনপুর, বড়কুমার এলাকা জুড়ে শোলার কাজের বরাত আসে খুব। ঠাকুরের ডাকের সাজ হোক বা প্যান্ডেলের! ছোটো বড়ো পুজোর বরাত এদের কাছেই আসে। শুধু শোলা বা বাঁশ নয়। প্যান্ডেল বানাতে এরা বেছে নেয় কাচ। ফেলে দেওয়া জিনিসে শিল্পের মায়া জাগায় এরা। প্যান্ডেলের কারুকাজ দেখে তাই হয় চোখের রসনাতৃপ্তি।
গোটা ভারত জুড়েই কাঁথির বেশ নামডাক। শুধু দুর্গাপুজো নয়। অন্যান্য বড়ো বাজেটের পুজোর প্যান্ডেলের বরাত আসে এইসব শিল্পীদের কাছে। তবে যেহেতু দুর্গা পুজো বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুজো! তাই এই পুজোতেই থাকে থিম প্যান্ডেলের বাড়াবাড়ি রকম চাহিদা। থাকে বড় বাজেটের মায়া। জুন মাসের শুরু থেকেই তাই চলে প্রস্তুতি। কলকাতার সিংহী পার্ক থেকে শুরু করে অনেক তাবড় পুজো আয়োজক যে মুখিয়ে থাকে শিল্পের খোঁজে। পুরুলিয়া, হলদিয়া, তমলুকের বড় বাজেটের পুজোর বরাতও আসে এদের কাছেই। নিতুড়িয়ার বাথানেশ্বরের চোখ ধাঁধানো প্যান্ডেলও এঁদের কীর্তি। শ্রম ও শিল্পের সমন্বয়ে প্যান্ডেলের নিজস্বতা! এভাবেই বারবার উপহার দিচ্ছে কাঁথি।
Discussion about this post