বাঙালির কাছে খাবারকে হতেই হবে স্বাদে-গন্ধে-রূপে একেবারে ‘জেনুইন’। কারণ এটাই তো আমাদের ঘরানার আদর্শ। চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয়তে থাকবে ছেঁচকি থেকে চাইনিজ। বঙ্গবাসী হওয়ার সুবাদেই বোধহয় এখনও এই ভাবাদর্শে বহু মানুষ বিশ্বাস রাখে। খাঁটি স্বাদ কালের নিয়মে মুছে যায় না তা জানা কথা। যেমন আমাদের মাখনলাল! কী এই মাখনলাল?
আদি কলকাতার সবথেকে পুরোনো বাজার ‘নতুনবাজার’-এর দু’শো বছরের ঐতিহাসিক ‘মাখনলাল অ্যান্ড সন্স’-এর মিষ্টির যারপরনাই তারিফ করার মতো। আর মাখনলাল-এ সবই ‘শুকনো’, অর্থাৎ সন্দেশ। কোনটা কড়া, কোনটা নরম। ব্যবহার করা হয় খাঁটি দুধ-ছানা। ‘পুরোনো’ নতুনবাজারের ভিতরে গলির রন্ধ্রে রন্ধ্রে পুরোনো ‘হ্যাল’ তো আছেই, সে দোকান দেখে মনে হতে পারে আপনি দু’শো বছর আগের টাইমলাইনে পৌঁছে গিয়েছেন। শো’কেস নয়, সে দোকানে মার্বেলের মেঝেতে বিছানো মাদুরে সুরূপা সব সন্দেশ গোছানো রয়েছে পেল্লায় সাইজের দু’চারটে কাঠ আর কাঁসার থালায়, ব্যাস। পাশেই কর্মচারীরা শশব্যস্ত ছানায় পাক দেওয়ায়। সবকিছুই চলছে আড়ম্বরহীনভাবে।
পারিজাত, চকোলেট, দিলখুশ, নতুন বাটার স্কচ, ব্ল্যাক কারেন্ট, গোকুল সন্দেশ — কত কী বাহারি নাম তাদের। মাত্র তিন টাকার মিষ্টি কিন্তু এখনও মেলে এইখানেই কলকাতার বুকে! সাউথে, বালিগঞ্জ কালচারালের কাছে অবশ্য একটা সময়োপযোগী শাখা হয়েছে এদের। পুরোনো দোকান যেহেতু পুরোনো খরিদ্দারও তো রয়েছেন প্রচুর।’ ‘মাখনলাল এন্ড সন্স’-এর ঐতিহ্যের হাত ধরে স্বাদ-গন্ধ-রূপ আজও অতুলনীয়।
Discussion about this post