শেষ পাতে মিষ্টি স্বাদ ছাড়া বাঙালির ভোজ প্রায় অসম্পূর্ণ। নিত্যদিনের খাওয়া থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন, মিষ্টি বাঙালির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দুধ দিয়ে তৈরী বিভিন্ন মিষ্টির পাশাপাশি দই ও পায়েসও বাঙালির শেষপাতের নিয়মিত পদ। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই পায়েস পরিচিত ‘ফিরনি’ নামে। পবিত্র ঈদে বাংলাদেশে বিরিয়ানির সঙ্গে মিষ্টিমুখের আদর্শ ও জনপ্রিয় উপাদান খাঁটি দুধের তৈরী ফিরনি। প্রাচীন সময়ে ফিরনি ছিল মধ্যপ্রাচ্য এবং পারস্যের খাবার। এটি ভারতে প্রথম নিয়ে আসেন মুঘলরা। জানা যায়, হুমায়ূন ইরানীদের খিচুরি খাইয়েছিলেন। তার বদলে ইরানীদের দেওয়া পাল্টা উপহার ছিল ফিরনি। মাটির বাটিতে দুধ, বাদাম ও সুগন্ধি চাল দিয়ে তৈরি পুডিং জাতীয় খাবার ছিল ফিরনি। পারস্যে বিশ্বাস করা হত যে, ফিরনি দেবদূত বা ফেরিস্তাদের খাবার। তাঁদের উদ্দেশেই নিবেদন করা হত এই সুখাদ্য।
ফিরনি তৈরি করা এমন কিছু কঠিন নয়। চেষ্টা করলে বাড়িতেই বানানো যায় এই পদ। ফিরনি তৈরীতে প্রয়োজন দুধ, চিনি, চাল, কাজুবাদাম ও কাঠবাদাম কুচি, এলাচ গুঁড়া। প্রথমে মিক্সারে ভালো করে ধুয়ে রাখা চাল সিদ্ধ করে নিতে হবে। এবার একটি প্যান গরম করে তাতে দুধ ঢেলে ফোটাতে হবে। এরপর গরম দুধের মধ্যে বেটে রাখা চাল ঢেলে দিতে হবে। দ্রুত নাড়াচাড়া করতে হবে, যাতে দলা বেঁধে না যায়। ততক্ষণ রান্না করতে হবে, যতক্ষণ না দুধ অর্ধেক না হয়ে যায়। এরপর এর মধ্যে চিনি মেশাতে হবে। চিনি দিয়ে তিন-চার মিনিট নাড়াতে হবে। এবার কুচানো কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম দিতে হবে। এলাচ গুঁড়া ও গোলাপজল মিশিয়ে দিতে হবে। খাবারের রুচি ও মান নির্ভর করে এর সুন্দর পরিবেশনের উপরে। পরিবেশনটা সুন্দর হলে খাওয়ার ইচ্ছেও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই বিভিন্ন জায়গায় মাটির খুরিতে সুন্দরভাবে ফিরনি ঢেলে বাদাম – কিসমিস ছড়িয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।
বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মিস্টির দোকান ‘রসগোল্লা’র ফিরনি নির্মাতাদের মতে, “দুধকে আগুনে ফুটিয়ে ৪০ কেজি দুধকে ১৫ কেজিতে নামিয়ে আনা হয়। তারপর সেই গাড়ো দুধে চিনিগুড়া চাল সেদ্ধ করে, সাথে হালকা চিনি দিয়ে তৈরী করা হয় দুধের ফিরনি। এরপর বাড়তি স্বাদ ও সুগন্ধি আনতে এলাচি, কাজু বাদাম, কাঠবাদাম, গোলাপ জল ছিটিয়ে মাটির বাসনে পরিবেশন করা হয়।”
Discussion about this post