গোটা কলকাতাবাসী প্রহর গুনছে কালবৈশাখীর জন্য। তবে জানেন কি কলকাতার সামান্য দূরেই হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের তিনটি গ্রাম মহিষগোট, চতুর্ভূজকাটি আর ভগবতীপুরের বাসিন্দারা চান না কোন ঝড় আসুক। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও তাদের এরূপ চাহিদার পিছনের কারণটি জানলে অবশ্যই শিহরিত হতে হয়। ২০০০ সালে এই বসতিগুলোর কাছাকাছিই ধূলাগড়ে অম্বুজা সিমেন্টের একটি কারখানা বসে। আর তারপর থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। কারখানার ধুলো, দূষণে নাজেহাল গ্রামবাসী আর তাদের আশঙ্কা এই যে কোন ঝড় এলে বিষাক্ত ধুলোর চাদরে ঢেকে যাবে গোটা এলাকা।
সম্প্রতি ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পরীক্ষায় জানা গিয়েছে গ্রামের বাতাসে দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪ গুণ বেশি। এমনকি দূষণের মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছে ২০১৯ সালের দিল্লি শহরের দূষণের মাত্রাকেও। বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে এরূপ মাত্রাতিরিক্ত দূষণ ঘটানোর জন্য অম্বুজা সিমেন্ট কারখানার জরিমানা হওয়া উচিত ৬ কোটি ৩ লক্ষ ২৮ হাজার ১২৫ টাকা। তা সত্ত্বেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। রমরমিয়ে চলছে কারখানার কাজ, বাড়ছে দূষণ। গ্রামের ঘরে ঘরে বাড়ছে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। জমিতে ফলছে না ফসল। ভুগছে পশুপাখি। এর এই সমস্যার কথা উচ্চতর কর্তৃপক্ষের গোচরে আনতে বারংবার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মহিষগোট পরিবেশ সুরক্ষা কমিটি। তাঁরা গত ২৬ এপ্রিল গ্রামবাসী ও পরিবেশ সুরক্ষার স্বার্থে এক মৌন প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন ধূলাগড় মোড়ের অম্বুজা সিমেন্ট কারখানার সামনে। বারংবার অভিযোগ জানানো হয়েছে সরকারি দপ্তরে, আইনি মামলাও চলছে। গ্রামবাসীদের কথায় ওপর মহল থেকে শুধু মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর বেশি আর কিছুই এগোয়নি।
ভারতীয় সংবিধানের ২১নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকের বেঁচে থাকার অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। আর সেই অধিকারে বাঁধ সাধলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। আর এই মৌলিক অধিকার হরণের দায়ে অভিযুক্ত অম্বুজা সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানাচ্ছে গ্রামবাসী এবং মহিষগোট পরিবেশ সুরক্ষা কমিটি। পরিবেশ দিবসে পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে আমরা নানা কর্মসূচি পালন করে থাকি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ে যায় সচেতনতার বাণী। অথচ একদল অসচেতন গোষ্ঠীর কাজের দায় ভুগছেন ধূলাগড়ের বাসিন্দারা, হাঁসফাঁসিয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।
Discussion about this post