মানুষের মধ্যে কতোটা সাহস থাকলে সে নেতাজির কথা অমান্য করতে পারে? না না, সাহস নয়! দরকার সাবলীল হওয়ার, দরকার নিজস্বতা থাকার- যা ছিলো লেখক শিবরাম চক্রবর্তীর। ভোজনরসিক শিবরাম চক্রবর্তীই প্রথম শিখিয়েছিলেন, নেশা ভালো জিনিসেরও করা যায়! তবে খারাপ দিক তো সবকিছুরই থাকে। এতোই খেতে ভালোবাসতেন, হাতে টাকা এলেই সবই খরচ করে ফেলতেন। শুধু একা খেতেন না। সাথে যাদের পেতেন সবাইকে নিয়ে যেতেন খাওয়াতে।
সবে তো অবাক হওয়া শুরু হয়েছে, একটু ধৈর্য ধরুন! কথা দিচ্ছি শেষে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে যাবেন। শিবরামবাবু একটিই শর্তেই যেকোনো সাহিত্য আসরে যেতেন। তাঁর জন্য মজুত রাখতে হবে রাবড়ি! অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই সবটা হাপিশ। আরও কিছু মজার ঘটনা লেখক ঘটিয়েছিলেন। লেখকের খুব কাছের বন্ধু কার্টুনিস্ট চন্ডী লাহিড়ীকে সাথে নিয়ে ঘুঘনি খেতে গিয়েছিলেন। ঘুগনি বিক্রেতাকে লেখক তিন প্লেট ঘুঘনি দিতে বললেন। বিক্রেতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “মানুষ তো আপনারা দুজন, আরেকটা প্লেট কাকে দেবো?” শিবরামবাবু হেসে বলেছিলেন, “আরে নিজে খাবে। নিজের তৈরি ঘুগনি নিজে খেয়েছো কখনো? আজ খাবে, আমি খাওয়াচ্ছি।” বিক্রেতা তো অবাক। শেষমেশ কিন্তু খেতেই হয়েছিলো তাকে।
এবার আসি আসল কথায়। নেতাজির কথা অমান্য করেছিলেন দুর্দান্ত এই লেখক, তাও আবার সাবলীলভাবে। কী ঘটেছিলো ঠিক? দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন চিঠি লিখলেন সুভাষচন্দ্র বসুকে। শিবরাম চক্রবর্তী বরাবর পছন্দের ছিলেন দেশবন্ধুর। সুভাষ বসু কে লেখা সেই চিঠিতে শিবরামবাবুকে আআত্মশক্তি কাগজে লেখক হিসাবে নিতে বলেছিলেন। সুভাষ বসু বেজায় খুশি হয়ে লেখককে চাকরি দিলেন। তবে ওই যে, শিবরামবাবু কি বাধাধরা ছকে কাজ করবেন? কখনোই না। তিনি একদিন অফিসে যান, আরেকদিন যান না। নেতাজি বেজায় চটলেন এই খবর পেয়ে। লেখকে সচেতন করে চিঠিও লিখলেন! কে শোনে কার কথা।
অবশেষে চাকরি খোয়ালেন। তবে নিজের পারিশ্রমিক পেয়ে সেই আবার রাবড়ির দোকানে পৌঁছে গেলেন! লেখক হিসাবে শিবরাম চক্রবর্তী চমৎকার সব সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ শিবরাম চক্রবর্তী আমাদের প্রাণ ভরে বাঁচতে শিখিয়েছেন। জীবনে যে খুব বেশি হিসেব করে চলতে নেই, তা বুঝিয়েছেন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে।
তথ্য ঋণ – ‘ঈশ্বর পৃথিবী ভালোবাসা’ গ্রন্থ
Discussion about this post