১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল। হঠাৎ এক হিমবাহের সাথে ধাক্কা লাগে বিশ্ববিখ্যাত টাইটানিক জাহাজের। এই তথ্য জানেন না বা সিনেমার পর্দায় দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তবে সেই জাহাজে আরও একজন ছিলেন যার জীবন কাহিনী শুনলে অবাক হবেন আপনিও! এই গল্প ‘মিস আনসিংকেবল’ ভায়োলেট জেসপের।
ভায়োলেট জেসপ পেশায় ছিলেন একজন জাহাজ সেবিকা। তার বিশেষত্ব কিন্তু অন্যদিক থেকে। বারংবার মৃত্যুকে হাতছানি দিয়ে দিব্য নিজের কাজ করে গিয়েছিলেন জেসপ। বহু মানুষের কাছে তার জীবন সংগ্রাম যে এক অনুপ্রেরণা হয়ে উঠবে তা নি:সন্দেহেই বলা চলে। মিস ভায়োলেট জেসপের জন্ম ১৮৮৭ সালে আর্জেন্টিনায়। আট ভাইবোনের মধ্যে জেসপ এবং আরও একজন ছাড়া সকলেই মারা যান খুব কমবয়সেই। আর্জেন্টিনা থেকে আয়ারল্যান্ড এসেই যক্ষা ধরা পড়ে ভায়োলেটের। ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিয়ে এসেছিলেন মিস ভায়োলেট। সেই থেকে শুরু মৃত্যুকে হাতছানি দেওয়ার খেলা।
মাত্র পনেরো বছর বয়সেই বাবাকে হারান জেসপ। কাজের সন্ধানে তাঁর পরিবার চলে আসে ইংল্যান্ডে। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। সেখানেই তাঁর মা একজন জাহাজ সেবিকা হিসাবে কাজ শুরু করেন। আর সংসার সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়ে ভায়োলেটের ছোট্ট কাঁধে। সবই ঠিক চলছিলো। কিন্তু জীবন অন্যভাবে বিপদে ফেললো জেসপকে। জেসপের মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। অগত্যা কাজে নামতে হলো এই মৃত্যুঞ্জয়ীকে। জেসপ দেখতে বেশ সুন্দর ছিলেন। সেইসময়ে সুন্দরী মেয়েদের জাহাজ সেবিকা হিসাবে কাজে নেওয়া বারণ ছিলো। জেসপ ইন্টারভিউ এর দিন গিয়েছিলেন একদম সাদামাটা ভাবেই। অবশেষে জাহাজ-সেবিকা হয়ে যোগদান করেন ‘আরএমএস অলিম্পিক’ জাহাজের যাত্রায়।
১৯১১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আরএমএস অলিম্পিকের চতুর্থ যাত্রায় বিশাল বড়ো দুর্ঘটনায় পড়ে এই জাহাজ, এক ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগেছিল। ভায়োলেট কিন্তু ভয় পাননি। আবারও যোগদান করেছিলেন নিজের কাজে। এরপরই ঘটে তাঁর জীবনের চিরস্মরণীয় ঘটনা। টাইটানিক জাহাজে জাহাজ সেবিকা ছিলেন ‘মিস আনসিংকেবল’। হিমবাহের সাথে ধাক্কা লাগার পরে ২২২৪ যাত্রীর মধ্যে ১৫০০ যাত্রীই মারা গিয়েছিলেন। আরও একবার মৃত্যুর সাথে লড়াইয়ে জিতে যান ভায়োলেট। পরে তার অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি।
এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও নিজের কাজ থেকে সরে যাননি নির্ভীক, নি:স্বার্থ এই সেবিকা। পরে আরও একটি ব্রিটানিকা জাহাজে সবিকা থাকাকালীন দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ৬৩ বছর বয়সে অবসর নেন এই সাহসী মহিলা। আর ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু তাকে সাথে করে নিয়ে চলে যায়। জীবন মানেই হাজারটা সমস্যা। জীবন মানেই, কখনো হার কখনো জিত। জীবন মানেই অদম্য এক জেদ। তবে মিস ভায়োলেট জেসপ এক অদ্ভুত অনুপ্রেরণা এই জীবনে বেঁচে থাকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় তিনি হলেন “মৃত্যুঞ্জয়ী”, যিনি জানেন কিভাবে প্রতিকূলতার সাথে, মৃত্যুর সাথে চোখে চোখ মিলিয়ে লড়াই করে যেতে হয়।
Discussion about this post