কলকাতায় চিন দেশ থেকে যে খাবার এই দেশ চলে এসেছে তা মোটামুটি স্বমহিমায় বিরাজমান। যেমন ধরুন চাউমিন বা চাওমিয়েন কীভাবে জনপ্রিয় হল? এটা জানতে হলে আমাদের পিছনে ফিরতে হবে। ১৮ শতকের শেষের দিকে ইয়াং আচিউ নামে এক চিনা ভদ্রলোক কলকাতায় এসে খোদ ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে এক বিরাট জমি লাভ করেন। তাঁর ব্যবসার কাজে অনেক চৈনিক শ্রমিককে কলকাতায় নিয়ে আসেন। সেই সময় চিনে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বহু চিনা উদ্বাস্তু কলকাতায় চলে আসেন। তারপর টেরিটি বাজারে গড়ে ওঠে প্রথম চায়না টাউন। পরবর্তী কালে ট্যাংরাতে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় চায়না টাউন। এঁদের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে চায়না অধ্যুষিত অঞ্চলে চিনা ভোজনশালা তৈরী হয়।
১৯২৪ সালে খোলে নানকিং রেস্টুরেন্ট। যেখানে রবি ঠাকুর স্বয়ং চিনা রান্না স্বাদ নিতে চলে আসতেন। এই শহরেই ধীরে ধীরে সত্তরের দশকে কলকাতার হেঁশেলে ঢুকে পড়ে চিনাদের নানা সুস্বাদু খাবার। তার মধ্যে বিখ্যাত ছিল হাক্কা বা গ্রেভি, প্যান ফ্রায়েড বা মাঞ্চুরিয়ান বা হুনান চাউমিন বা চাওমিয়েন। চিনের হাক্কা নামটি এসেছে চিনের হাক্কা প্রদেশের অধিবাসীদের থেকে। এর কারণ কলকাতার সর্বপ্রথম চিনের অভিবাসীদের মধ্যে এক বড় অংশ এসেছিলেন চিনের হাক্কা প্রদেশ থেকে।
কলকাতার এক চিনা পরিবার পরিচালিত প্রাচীন চৈনিক রেঁস্তোরা মিশন রো এর ইউ চিউ এখনও খাঁটি চিনা রান্না পরিবেশন করে থাকে। এদের জোসেফাইন নুডলস খুবই জনপ্রিয়। এঁদের রান্নার বিশেষত্ব হল কোনও রকমের সস ছাড়াই নানাবিধ সবজি, শাকপাতা, চিংড়ি বা মাংস সহযোগে চাওমিন প্রস্তুত করেন। আসলে বাঙালী মাত্রই খাদ্যরসিক। তারা খাবারের মধ্যে বৈচিত্র্যকেই ভালোবাসে।
Discussion about this post