বিশাল বটগাছের তলায় ত্রিপল খাটানো,রাস্তার ধারেই রান্নার একটুখানি জায়গা। গত পঞ্চাশ বছর ধরে হিন্দুস্থান পার্কের এই অঞ্চলেই পাইস হোটেল চালাচ্ছেন মঙ্গলাদেবী। তাঁর হোটেলে পাওয়া যায় মাছ, ডিম, মাংস- সবধরণের খাবার। দাম? মাত্র তিরিশ টাকা ! প্রশ্ন উঠতে পারে, এই আগুন বাজারে মাত্র তিরিশ টাকায় মঙ্গলাদেবী হোটেল চালান কিভাবে? উত্তর মঙ্গলাদেবীই দেন। হোটেলের সমস্ত কাজ একা হাতে করেন তিনি নিজেই। এই দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরেও কোনো কাজের লোক তিনি রাখেননি। বাজার করা, তরকারি কাটা থেকে শুরু করে রান্না, খাবার পরিবেশন, দোকান সামলানো সবই তিনি করেন একাই।
প্রতিদিন প্রায় আট থেকে দশ কেজি চালের ভাত নিয়ে বসেন মঙ্গলাদেবী। বেলা এগারোটা থেকে বিকেল তিনটের মধ্যেই সব খাবার শেষ হয়ে যায়। মঙ্গলাদেবীর ঘরোয়া রান্নার টানে নিয়মিত অফিস-কাছারির মানুষেরা যেমন আসেন, তেমনি আসেন অন্যান্য মানুষও। আবার ভাত শেষ হয়ে গেলে নিজের বরাদ্য খাবার থেকেই গ্রাহককে খাবার তুলে দেন মঙ্গলাদেবী।
স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ায় মাত্র ১৮ বছর বয়সে মঙ্গলাদেবী হোটেলটি শুরু করেছিলেন। সংসার, ছেলে-মেয়েদের দায়িত্ব এসে পড়েছিল তাঁর কাঁধে। এরপর কেটেছে ৫০টা বছর। সংসার কিছুটা স্বচ্ছল হয়েছে। ছেলেমেয়েরাও বড় হয়েছেন। কিন্তু, হোটেল বন্ধ করতে পারেননি ৭০ ছুঁই ছুঁই এই বৃদ্ধা। তিনি মেয়ের কাছে থেকেই রোজ ভোর পাঁচটা থেকে কাঠের উনুনের পাশে তাঁর কাজ শুরু করেন। যাতে অভাবের জন্য কেউ না খেয়ে ফেরে, তাই মঙ্গলাদেবী তিরিশ টাকার বেশি খাবারের দাম বাড়াননি। মানুষের সেবা করেই তাঁর আনন্দ। তিনি চান যতদিন বেঁচে রয়েছেন, হোটেল যেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
Discussion about this post