হাওড়া মানেই পরতে পরতে লেগে থাকা ইতিহাস। পুরনো কোনো দোকান থেকে শুরু করে শতবর্ষব্যাপী কোনো বাড়ির পুজো- সবকিছুতেই হাওড়া বেশ ঐতিহ্যশালী হয়ে উঠেছে দিন দিন। ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে রোজ রোজ কতশত নস্টালজিয়ার যে মুখোমুখি পড়তে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে এবার কোনো দোকান বা পুজো নয়, পাওয়া গেল ১৯২৩ সালের একটি ঘটনা। পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ আমলে প্রথম পাশ হয়েছিল একটি বাস রুটের। হাওড়া স্টেশন থেকে রামরাজাতলা। রুট নং ৫২। সেই বাসরুট ২০২২ সালে অর্থাৎ চলতি বছরে পা দিল শতবর্ষে। এ তো আর চারটি খানি কথা নয়! তাই রীতিমতো কেক কেটে উদযাপন করা হয়েছে জন্মশতবর্ষ।
৫২ নম্বর রুটের বাসমালিকেরা জানান, স্বাধীনতার আগেই এই রুটে বাস চালানোর অনুমতি দিয়েছিল ব্রিটিশ সরকার। প্রথমে কয়লার ইঞ্জিনের সাহায্যে বাস চালানো শুরু হয়। তবে তখন কোনও নাম ছিল না। বাসের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা মাত্র। প্রথমে রামরাজাতলা থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত চালু হয়েছিল এই রুট। ১৯৮০ সালে সেই রুট বাড়ানো হয় ধর্মতলা পর্যন্ত। পরে অবশ্য এক দিকে খটিরবাজার থেকে হাওড়া স্টেশন, অন্য দিকে ইছাপুর থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত চলাচল শুরু করে ৫২ নম্বর বাস। ১৯৮৫ সাল থেকে মধ্য হাওড়ার সুরকি কল থেকে ধর্মতলা এবং চ্যাটার্জিহাট-ধর্মতলা রুটে শুরু হয় পরিষেবা।
কিন্তু হঠাৎ রুটের নাম ৫২ নং দেওয়ার কারণ কী? প্রশ্ন তো জাগতেই পারে! আসলে হাওড়ার যমজ শহর কলকাতায় ট্রামের রুট ছিল ৫০ নম্বর পর্যন্ত। আবার সে সময় চালু হয়েছিল ৫১ নম্বর রুটও, হাওড়া থেকে বালিখাল। তাই পরবর্তী নম্বর হিসেবে বিবেচিত হয় ৫২। আগে রামরাজাতলার রামের মন্দিরের সামনে কার্যত ঘিঞ্জি এলাকায় ছিল ৫২ নম্বর বাসের স্ট্যান্ড। ২০১১ সালে সেই ঐতিহাসিক বাসস্ট্যান্ড তুলে নিয়ে আসা হয় কিছুটা দূরে রামরাজাতলা বাজারে। সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে আজকের রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ! এই ১০০ বছরে প্রায় সমস্ত পরিবর্তনের সাক্ষী এই রুট।
প্রাচীন এই বাস রুটে যাত্রী কমে যাওয়ায় রুটটি কার্যত ধুঁকছে। মালিকদের অনেক লোকসান হওয়ায় অনেকেই বাস তুলে নিচ্ছেন। তাদের দাবি, আধুনিক মানের বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে ঐতিহ্যশালী এই রুটটি যাতে আগের মতোই চলতে পারে, সে দিকে নজর দেওয়া উচিত রাজ্য পরিবহণ দফতরের। একমাত্র করোনার সময় ছাড়া এই একশো বছরে একবারও চাকা থামেনি ৫২ নং রুটের বাসগুলোর। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার প্রতিযোগিতায় এখনও চাকা গড়াচ্ছে এই ঐতিহাসিক রুটের ২৯ টি বাসের।
Discussion about this post