সুখের ঠিকানা পেতে আমাদের গাড়ি বাড়ি টাকা পয়সা সবটাই লাগে। কিন্তু কখনো ভেবেই দেখি না এসব পেয়ে আদৌ আমরা সুখকে ধরতে পেরেছি কি না? না হয়ত পারিনি। কারণ মানসিক এই চাহিদার কোনো শেষ নেই। কিন্তু যাদের এই চাহিদাটাই নেই। যারা কোনোদিন মিথ্যে বাড়ির সুখ কল্পনাই করেনি। তারা কিন্তু সেই সুখের হদিশটা পেয়েই যায়। তবে চলুন তেমনই এক পরিবার থেকে জানি অল্পেই ভালো থাকার রসদটা।
মিগুয়েল রেসট্রিপো। কলোম্বিয়ার মেডেলিনে থাকতে মিগুয়েলের পরিচয় হয় মারিয়ার সাথে। তখন দুজনেই ছিলেন মাদক দ্রব্যে আসক্ত। ওই এলাকাও তখন লড়াই-যুদ্ধ- মাদক পাচারে বেশ কুখ্যাতি কুড়িয়েছে। কিন্তু ভালোবাসা যে কখন কিভাবে কার জীবনে ধরা দেবে বোঝা দায়। ভাগ্যচক্রে ওরা একে অপরের কাছাকাছি আসে। স্বপ্ন দেখল ঘর বাঁধার। কোনো ইট পাথরের চার দেওয়াল নয়। এ ঘর ছিল শুধুই একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি মাত্র। মাদকের হাত থেকে সম্পূর্ণ নিজেদের সরিয়ে নতুন এক জীবন শুরু করতে চলল তারা। কিন্তু আশ্রয়? দু’জনেরই তেমন কোনো চেনা পরিচিতি ছিল না। এই ভাবনাতেই রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ তাদের নজর গেল রাস্তার পাশের জঞ্জালে ভরা ম্যানহোলটার দিকে। আর সেই ম্যানহোলটিকেই পরিষ্কার ও পরিপাটি করে গুছিয়ে নিল দুজনে। শুরু হল ম্যানহোলের সংসার।
এভাবেই এক এক করে ২৬ টা বছর ধরে ম্যানহোলকেই নিজেদের ঠিকানা করেছে মিগুয়েল ও মারিয়া। তারা বেশ সুখেই দৈনন্দিনের যাপনটা সারে ওখানে। অভিযোগ নালিশ ঝগড়ার কোনো বালাই নেই। আবার বস্নাকি নামের একটি কালো কুকুরকেও পোষ মানিয়েছে তারা। এই তিন সদস্যের ছোট্ট সংসারটি এখনও ওই সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার ম্যানহোলটির মধ্যেই বেঁচে থাকে সুখের তাগিদেই। তবে মাঝেমধ্যে সমস্যা তৈরী করেন সরকারি কর্মকর্তারা। ম্যানহোল ছাড়ার নির্দেশ জারি হলেই চিন্তায় মাথাচাড়া দেয় দুজনের। তবে ওই ভয়কে পুষে রেখেই দিব্যি আছে তারা। ওই সাড়ে চার ফুট বাই দশফুটের ম্যানহোলের মধ্যেই রয়েছে তাদের একটুকরো রান্নাঘর, বিছানা, চেয়ার, বৈদুতিক পাখা এমনকি রঙিন টিভিও। উৎসবী মরসুমে ওই ম্যানহোলকেই সাজিয়ে তোলে মনের মতো করে। সত্যি বলতে ওদের ভালোবাসার এই আঁতুড়ঘরটিকে নিয়ে তাদের কোনো খারাপ লাগা নেই। মিগুয়েলের মতে সে কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতির থেকেও সুখে শান্তিতে থাকে এই ম্যানহোলে। এর চেয়ে বেশি চাহিদা তাদের একদমই দরকার নেই। এই ভাবেই হয়ত সুখের স্পর্শটা উপভোগ করে রোজ এই সুখী দম্পতি।
Discussion about this post