রাজবাড়ির পুজো মানেই এলাহি এক ব্যাপার। আজকালকার থিমের যুগেও বনেদিয়ানায় মোড়া এই পুজো গুলোই আমাদের যেন টাইম মেশিনে চড়িয়ে নিয়ে যায় সুদূর ইতিহাসের বুকে। পুজোর এলাহি আয়োজন, অভিনব সব প্রথা, বহু পুরনো ঐতিহ্য-সব মিলে মিশে এক সুন্দর পুজোর পরিবেশ। তেমনই এক বহু পুরনো রাজবাড়ির হদিশ মেলে হুগলী জেলার অন্তর্গত চণ্ডীতলার জনাইতে। জনাই রাজবাড়ির এই পুজো আনুমানিক ২৫০ বছরের পুরনো।
পুজো শুরু হয়েছিল কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে। তৎকালীন ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল কালীবাবুর। সেসময় তিনি অনেকদিন ভাগলপুরের দেওয়ান হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন। জন্মস্থান বেনারস হলেও হুগলীর জনাইতে অধিকাংশ জীবনটাই কাটিয়েছেন তিনি। ১৭৫৭-র পলাশির যুদ্ধের সময় তৈরি হয়েছিল এই জনাই রাজবাড়ি। এই এলাকার একটি শ্মশানের কিছুটা অংশে তিনি তৈরি করেছিলেন রাজবাড়ি। জানা যায়, তিনি সাধনা করে একদিন এই রাজবাড়িতেই দেবী দুর্গার দর্শন পেয়েছিলেন। মা দুর্গার আদেশেই শুরু করেন তাঁর আরাধনা। আজও রাজবাড়ির সদস্যদের পাশাপাশি পুজোয় অংশ নেন এলাকার বাসিন্দারা।
নেই আর সেই পুরনো সময়। নেই পুরনো রাজ্যপাট। তবু যথাযথ প্রথা মেনে প্রায় ২৫০ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে বংশপরম্পরায়। এমনকি আভিজাত্যের কোনো অভাবও মেলেনি আজ অবধি। পরিবারের সদস্যদের কথা অনুযায়ী, রাজবাড়ির পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত সব কাহিনী। যেমন একসময় এই বাড়িতে পা পড়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখের মত বিখ্যাত মনীষীদের। শুধু তাই নয়, এই রাজবাড়িতে এখনও মাঝেমধ্যে বহু বাংলা সিনেমার শুটিংও হয়। এভাবেই নানান ইতিহাস ও অজানা সব কাহিনীর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হুগলীর জনাই রাজবাড়ি।
Discussion about this post