গুগলে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখা যায়, সবচেয়ে কম বয়সী মায়েদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। এদের মধ্যে ১০ বছরের নিচে রয়েছে ১০০’রও বেশি শিশু। এত কম বয়সে মা হওয়াটাই যথেষ্ট ভয়াবহ! তবে এর থেকেও অনেক বেশি চিন্তার বিষয় যে কারা এই সন্তানের বাবা! জানলে অবাক হবেন; সেই তালিকায় শিশুটির প্রতিবেশী, আত্মীয়, কাকা, দাদা, দাদু থেকে শুরু করে রয়েছে তার বাবাও। তবে আজ আপনাদের একটু অন্যরকম এক মায়ের কাহিনী শোনাবো। এমন এক মা, যে ‘সবচেয়ে কম বয়সী মা’র তালিকায় সবচেয়ে ওপরে রয়েছে। এমনকি সেই সময়ের সংবাদপত্রের অন্যতম রসদও ছিল সেই মেয়েটি।
মাত্র সাড়ে পাঁচ বছর বয়সেই মা হওয়া সেই মেয়েটি ছিল পেরুর বাসিন্দা। নাম লিনা মেডিনা। গর্ভকালীন অবস্থায় তার পেট দেখে মেয়েটির মা-বাবা মনে করেন, পেটে হয়ত কোনও টিউমার হয়েছে। পরে ডাক্তারের কাছে গেলে ব্যাপারটা খোলসা হয়। ডাক্তার জানান লিনা গর্ভবতী। এত কম বয়সে গর্ভধারণের ঘটনা তো আর সচরাচর দেখা যায় না। ফলে ডাক্তার নিজেও বেশ অবাক হন। এক বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেন তিনি। বিশেষজ্ঞটিও জানান লিনা গর্ভবতী এবং তার মা হতে কোনও সমস্যাই নেই। ১৯৩৯ সালের ১৪ মে লিনা একজন সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। কম বয়সে উপযুক্ত পেলভিস না থাকার দরুন সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমেই সন্তানটি প্রসব হয় তার। এখনও পর্যন্ত সফলভাবে সন্তানের জন্ম দেওয়া সর্বকনিষ্ঠ মা লিনা। তার সন্তান প্রথমদিকে তাকে মা নয় বরং দিদি বলেই জানত। ১৯৭৯ সালে ৪০ বছর বয়সে বোন-ম্যারো রোগে মারা যায় ছেলেটি। এই সন্তানের পিতা যে ঠিক কে আজ পর্যন্ত তা অজানাই থেকে গিয়েছে। লিনার বাবাকে যৌন হেনস্থার কারণে আটক করা হলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছেড়েও দেওয়া হয়েছিল।
তবে এই প্রসঙ্গেই কিছু অজানা তথ্যে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। যেহেতু এই সন্তানের কোনো পিতৃপরিচয় থাকে না, তাই ধরা যেতে পারে সে বা তারা হয়ত কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত যৌনতার শিকার। আবার অপরদিকে আরো একটি সম্ভাবনাও মোটেই অস্বীকার করা যায় না। এরকম হতেই পারে যে ছেলেটি হয়ত তার যমজ ভাই। ব্যাপারটা বেশ চমকপ্রদ হলেও একেবারে ভিত্তিহীন কিন্তু একেবারেই নয়। যখন মায়ের পেটে যমজ সন্তান তৈরি হয়, সেসময় দুটি আলাদা ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অবস্থিত ভ্রুন দুটির কোনো একটি তুলনামূলক বেশি পুষ্টি লাভ করে অপর ভ্রূণের চেয়ে সবল ও আকারে বড় হয়ে যায়। এই রকম অবস্থায় যদি কোনও কারণে ছোট ভ্রূণটি বড় ভ্রূণের মধ্যে ঢুকে যায় তবে তা আর বেড়ে উঠতে পারে না। ফলে বড় ভ্রূণটিই শুধু বেড়ে ওঠে এবং একসময় তা পরিণত শিশুরূপে ভূমিষ্ঠ হয়। এদিকে ছোট ভ্রূণটি শিশুটির মধ্যে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। শিশুটির পেট ক্রমশ ফুলে যেতে থাকে থাকে। প্রথম অবস্থায় টিউমার মনে করা হলেও পরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
এই ঘটনা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রেই নয় বরং ছেলেদের ক্ষেত্রেও একইরকম প্রাসঙ্গিক। ২০১১ সালে বাংলাদেশের এক ব্যক্তি তার পেটের অস্বাভাবিকত্ব নিয়ে হাসপাতালে গেলে তাকেও জানানো হয় তার পেটে টিউমার নয়, আছে আস্ত একটি সন্তান। কাজেই এটা বলা যেতেই পারে লিনার বাচ্চাটি তার নিজের সন্তান নয়। বরং তার যমজ ভাই। ঘটনাটি কিছুটা রহস্যময় হলেও অসম্ভব কিছুই না। তবে বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই রহস্যের যে খুব শীঘ্রই সমাধান হবে, এমনটা আশা করা যেতেই পারে।
তথ্যসূত্র: ১. Lina Medina,the youngest confirmed mother in medical history, 1939 ২. বগুড়ায় পুরুষের পেটে মানব শিশু,দৈনিক সংগ্রাম।
Discussion about this post