ফেসবুক টাইমলাইন স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটা পোস্টে। ওসমান গনি খান নামে নদীয়ার পলাশীর এক যুবক পোস্ট করেছেন – “এবার ঈদের নতুন জামা কাপড় ক্রয় না করে, সেই টাকায় কিছু ক্ষুধার্ত মানুষের খিদে মেটাবো। ইনশাল্লাহ।” এই পোস্ট দেখে সেই যুবকের কাজ সম্পর্কে জানতে আগ্রহ জাগলো। ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর তরফে যোগাযোগ করলাম পলাশীর যুবক ওসমানের সাথে। কথা বলে জানতে পারলাম বহরমপুর কমার্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ওসমান ঠিক করেছে এবারের ঈদে জামা কাপড় কেনার জন্য যে তিন-চার হাজার টাকা তার বরাদ্দ ছিল, সেই টাকায় নতুন জামা কাপড় সে না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার বদলে পুরনো জামা কাপড়েই এবারের ঈদ কাটাবে সে! বরং সেই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে চেষ্টা করবে লকডাউনে কিছু অভুক্ত পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে। তার কথায় “এ টাকায় হয়তো চার-পাঁচটা পরিবারের খাবারের যোগান দেওয়া যাবে। একবার ঈদে যদি নতুন কাপড় নাও পরি তাও চলবে, কিন্তু সেই মানুষগুলো না খেয়ে কীভাবে থাকবে?”
সমাজ কর্মী ওসমান ‘সাহায্যের ফেরিওলা’ ও ‘এমারজেন্সি ব্লাড সার্ভিসেস’ নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের সাথে সরাসরি জড়িত। ২০১৬ সাল থেকেই ‘এমারজেন্সি ব্লাড সার্ভিসেস'(ইবিএস) সংগঠনের মাধ্যমে তারা ধারাবাহিকভাবে মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করে চলেছে। ইবিএস’এর এক স্বেচ্ছাসেবক রাজেশ বলেন, “আমরা নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংকে রক্ত দান করে আসছি, আমাদের সঙ্গে থাকা অনেক বন্ধু রোজা ভেঙেও রক্ত দিচ্ছেন। রাত ১২ টাতেও তারা পৌঁছে যাচ্ছেন ব্লাড ব্যাংকে। এই করোনা পরিস্থিতিতে রক্তের বিপুল হাহাকার তৈরী হয়েছে দিকে দিকে। আমরা রাত দিন চেষ্টা করছি কীভাবে সেই বিপুল রক্তের চাহিদা মেটানো যায়।
ওসমানের এক বন্ধু মকবুলের কথায়, “লকডাউনে যখন এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ সেই পরিস্থিতিতেও গত ২৭ এপ্রিল আমাদের ইবিএসের বন্ধু রাম নদীয়া থেকে মুর্শিদাবাদ গিয়ে রক্ত দিয়ে এল। গত ৪ মে রোজা ভেঙে পলাশী থেকে তেহট্ট ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসেন আলম ভাই। আবার ঠিক তেমনি আমাদের ‘সাহায্যের ফেরিওয়ালা’র ছেলেরা সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় অসহায় ও ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে। বিনামূল্যে ওষুধ দিয়ে আসছে ক্যান্সার রোগীদের। লকডাউনের জেরে বিভিন্ন জায়গা থেকে পায়ে হেটে ঘরে ফেরা মানুষদের কথা ভেবে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের পাশে আমরা দাঁড়িয়ে আছি জলের বোতল ও শুকনো খাবার হাতে।
ওসমান জানালেন, রক্তের জোগাড় করতে তাঁরা হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এর সঙ্গেই গরিব মানুষদের খাবার পৌঁছে দেওয়া, পথের ধারে থাকা ভারসাম্যহীন মানুষদের দাঁড়ি-গোঁফ এবং চুল কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাদের খাবার-দাবার দেওয়া, অসহায় মানুষদের জন্য জামাকাপড়ের ব্যবস্থা করা সহ বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। সামনে ঈদ আসায় আমরা যেমন প্রতি বছর অসহায় ও আদিবাসীদের জামা কাপড় দিতাম, এই বছর শুধু জামা কাপড় না দিয়ে আরও বেশি পরিমাণে তাদের মুখে খাবার তুলে দেব। যাতে তারা এই সময়টা আরও ভালোভাবে কাটাতে পারেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা প্রায় দেড়শো’রও বেশি ইউনিট রক্ত দিয়েছেন। প্রায় ৩০০ পরিবারকে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। তারা চাইছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে। আরও বেশি বেশি করে ভালোবেসে বেঁধে বেঁধে থাকতে।
প্রতিবেদক – অঙ্কিত সরকার
Discussion about this post