বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।” এ যাবৎ নানান ক্ষেত্রে আমরা এই প্রবাদের যৌক্তিকতা খুঁজে পেয়েছি বহুবার। মানুষ তার বিশ্বাসের ওপর ভর করেই অনেক প্রাচীনকাল থেকে ঈশ্বরজ্ঞানে ভক্তি করে আসছেন আকাশ-বাতাস-গাছকে। এ আর নতুন ব্যাপার কি! এ প্রসঙ্গে যার উল্লেখ না করলেই নয় তা হল শিবরাম চক্রবর্তীর কালজয়ী সৃষ্টি ‘দেবতার জন্ম’- রাস্তার মাঝে পড়ে থাকা পাথরটি হঠাৎ একদিন পুজো পাচ্ছে অশ্বত্থ গাছের গোড়ায় ফুল-বেলপাতা যোগে। যাই হোক, এতো গেল ভীতি থেকে দেবতার সৃষ্টির কথা। মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসেও যুগ যুগ ধরে তার আরাধনা করছেন ভক্তিভরে। বাংলার বিভিন্ন জায়গার বিশেষ কিছু নিদর্শন তুলে ধরেছিলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের বিশিষ্ট অধ্যাপক ডা. তাপস পাল মহাশয়। আজ থেকে ঠিক এক দশক আগে। চলুন দেখে নিই কেমন ছিল আমার আপনার এই বাংলা।
বিশিষ্ট অধ্যাপকের গবেষণালব্ধ ফসল ২০১২-র এই পশ্চিমবঙ্গ। তিনি তাঁর ‘৩৭ দিন’-র সফরে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিস্ময়কর কিছু দৃশ্যকে লিপিবদ্ধ করেছেন। তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত লাল মাটির জেলা বাঁকুড়ার মানুষদের নিখাদ প্রকৃতিপ্রেম। বিচ্ছিন্ন এক পাহাড়কে তারা দেবতা রূপে পুজো করেন। অন্যদিকে ছাতনার কামাকুলি গ্রামের মানুষ এখনও বৃষ্টির কামনা করে এক বট গাছের তলায় করেন জৈষ্ঠ্য পুজো। প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আরেকটি পুজো হল গোবর্ধন গিরি পুজো। পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের স্থানীয়রা তিথি মেনে করেন এই পুজো। পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একবার ইন্দ্র বৃন্দাবনে প্রবল জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে সব ভাসিয়ে দিতে বসলে শ্রীকৃষ্ণ বিশাল পর্বত ধারণ করে গ্রামবাসীদের রক্ষা করেন। এই ঘটনার পরিপ্রক্ষিতেই গ্রামবাসীরা এখনও গোবর্ধন গিরি পুজো করেন প্রবল বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে।
এছাড়াও পুরুলিয়ার হুড়ায় মাগুড়িয়া পাহাড় পুজো, বিরিঞ্চি ধামে পাহাড়ে শিব পুজো এবং নিতুড়িয়ায় পাহাড় আরাধনা দেখতে পাওয়া যায়। একইভাবে বাঁকুড়ার সিন্ধী পাহাড়কেও পুজো করেন স্থানীয়রা। বীরভূমের যে মামা ভাগ্নে পাহাড়ে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে যান, সেটিও এক পাহাড় পুজোরই নিদর্শন বটে। তবে বীরভূমের নলাটেশ্বরী পাহাড়ের পুজোর কথা না বললে ‘পাহাড় পুজো’ বিষয়টাই অসমাপ্ত থেকে যায়। পাহাড়টির একদিকে হজরথ অংশরী বাবার মাজার অন্যদিকে চলে দেবী সতীর পুজো।
Discussion about this post