এপ্রিল মাস বিশ্ব সাহিত্যের জগতে সম্রাটসম সাহিত্যিক ইউলিয়ম শেক্সপিয়ারের জন্মের মাস। আবার শুধু জন্ম মাসই নয়, তাঁর মৃত্যুর মাসও বটে। শুধু মাসটাই এক নয়, এক তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর তারিখটিও। এমন এক প্রবাদ প্রতিম মানুষ, যার সাহিত্যকীর্তি বিশ্ববিখ্যাত তো বটেই, তাঁর জন্ম-মৃত্যুর মধ্যেও যেন রহস্যের বেড়াজাল। এই রহস্যময় ব্যক্তিত্ব, যাঁর সঙ্গে যুক্ত সাহিত্যের দুনিয়াও, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুর মাসটি কী বৃথা যেতে পারে? সেইজন্যই বোধহয় আজকের দিনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বইকে। মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু বই। আজ ২৩ এপ্রিল। বিশ্ব বই দিবস।
১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা গিয়েছিলেন স্পেনের এক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আধুনিক স্পেনীয় সাহিত্যে যাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। আর তাঁর ভাবশিষ্য ছিলেন স্পেনীয় কথাকার ভিসেন্ট ক্লাভেল আন্দ্রেজ। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণ করার জন্য ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেজ পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। কিন্তু সেই উদযাপন সীমাবদ্ধ ছিল স্পেনের মধ্যেই। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার দাবি উঠলেও সে দাবি সকলের নজরে আসেনি। ফলে দিনটিকে বাস্তবে জনসমাজের সর্বস্তরে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয় বহুদিন, বহুবছর। অবশেষে ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংগঠন ‘ইউনেস্কো’ দিনটিকে ‘বিশ্ব বই দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তা পালিত হয়ে চলেছে আজও।
খুব অদ্ভুতভাবেই শুধু শেক্সপিয়র নন, এপ্রিলের এই ২৩ তারিখেই মৃত্যু হয়েছিল রোমান্টিক কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের, মৃত্যু হয়েছিল পেরুভিয়ান লেখক ইনকা ডে লা ভেগার। জন্মগ্রহণ করেছিলেন ফরাসি কবি মরিস ড্রাওন, কলম্বিয়ান লেখক ম্যানুয়েল মেইয়া, নোবেল পুরস্কারজয়ী আইসল্যান্ডের লেখক হাল্ডোর লক্সনেসের মত একাধিক সাহিত্যিক। আবার আজকের তারিখেই প্রয়াত হয়েছিলেন নেপালি ভাষার আদি কবি ভানুভক্ত আচার্য, বাঙালি বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ও প্রাবন্ধিক অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ। আজকের দিনেই মৃত্যু হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের। বিশ্ব চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তাঁকে চিনলেও, বাংলা সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
এই ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবসটিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ এবং বইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করার প্রতি জোর দেওয়া হয়ে থাকে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে পড়ার আগ্রহ এখন নেই বললেই চলে। হাতের মুঠোয় এখন পিডিএফ, ইবুক। তবু, যাঁরা পড়ুয়া, তাঁরা সবসময়ই পড়েন। পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েই এইবছরেও তাই পালিত হচ্ছে বিশ্ব বই দিবস।
Discussion about this post