শীতকাল এলেই যেন ধুম পড়ে পিঠে পায়েস খাওয়ার। ঘরে ঘরে পিঠে তৈরির মাস চলে। তবে বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই চাকুরিজীবী হওয়ায় তাদের হাতে নেই একটুও সময়। তাই বহু মানুষ বাইরে থেকে কিনে আনেন পিঠে। আর সেই পিঠে বেচে পেটের ভাত জোগাড় করেন বহু নারী। মধুখালী উপজেলার মধুপুর গ্রামের হাসিনা বেগম এমনই এক পিঠে বিক্রেতা।
বছর পঞ্চাশের ওই মহিলার স্বামী ৮ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তার স্বামীর মৃত্যুর পর ১ ছেলে ও ৩ মেয়েকে একাই মানুষ করার মতো কঠিন দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন। দারিদ্রতার বেড়াজাল ছিঁড়ে ফেলতে হাসিনা বেগম পিঠে বিক্রি করা শুরু করেন। তবে স্বামীর মৃত্যুর ঠিক ৩ বছর পরেই একমাত্র ছেলেও মারা যায়। এরপর ২ মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন তিনি। আর আরেক মেয়েকে অনেক ঝড় সহ্য করে মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন। সংসার চালানোর জন্য অনেক ধরনের কাজ করলেও বিগত ৪ বছর ধরে এই পিঠে বিক্রি করেই চলছে সংসার। শুধু শীতকাল নয়, সারাবছরই কম বেশি পিঠে বিক্রি করেন। তবে শীতকালে বিক্রি থাকে তুঙ্গে।
মধুখালী রিকশা স্ট্যান্ড (সাবেক কৃষি ব্যাংকের নিচে) এলাকায় পিঠে বিক্রি করেন হাসিনা বেগম। তিনি পিঠে বানানোর পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন। খেঁজুর গুড় ও চালের গুঁড়ো দিয়ে বানানো হয় ভাপা পিঠে। চালের গুঁড়োর সাথে জল মিশিয়ে তৈরি করা হয় চিতই পিঠে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫-৭ কেজি চালের পিঠে বিক্রি করেন তিনি। পিঠে তৈরির যাবতীয় খরচ বাদে লাভ হয় দিন প্রতি ৫০০-৬০০ টাকা। তবে শুধুই কি হাসিনা বেগম! এই এলাকার আরও অনেক জায়গায় তার মতো শত শত মহিলা এই পিঠে বিক্রি করে সংসার চালান। মধুখালীর রাস্তার বিভিন্ন জায়গাতেই সারি সারি পিঠের দোকান বসে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পিঠে বিক্রি হলেও, সন্ধ্যার সময় বাড়ে ক্রেতাদের ভিড়। পিঠে কেনার জন্য পড়ে লম্বা লাইন। কেউ কেউ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে খায় পরম তৃপ্তির সঙ্গে। আবার কেউ বাড়ি নিয়ে যায় পরিবারের জন্য।
বহুযুগ ধরেই এই এলাকার পিঠের স্বাদ মনে দাগ কেটে রেখে দেয় সকলের। মধুখালীর কিছু মনে রাখার মতো পিঠে হল ভাপা পিঠে (১০ টাকা), তেলের পিঠে (৫ টাকা), পাটিসাপটা, চিতই পিঠে (৫ টাকা), খুচানি পিঠে (৫ টাকা)। আবার চিতই পিঠের সঙ্গে মেলে শুঁটকি, ধনেপাতা, সরিষা ও মরিচের ভর্তা সহ আরও অনেক রকমের ভর্তা।
চিত্র ঋণ – Somoy News TV
Discussion about this post