মাতৃভাষা প্রতিটি মানুষের কাছে গর্বের ভাষা, ভালোবাসার ভাষা। আমাদের মনের আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ পায় আমাদের মাতৃভাষা, বাংলার মাধ্যমেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে ইংরেজির আধুনিকতার কাছে কোথাও যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রাণের মাতৃভাষা। তবে এই স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কলকাতাবাসী সুজাতার হাত ধরে, এই বাংলাই হয়ে উঠল লড়াইয়ের ভাষা। গত বছর কলকাতার একটি বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি নার্সিং হোমে শারীরিক সমস্যা কারণে তার বয়স্ক মাকে ভর্তি করেন সুজাতা ভট্টাচার্য। কিন্তু তার অভিযোগ, শুরু থেকেই সেখানকার ডাক্তারদের সাথে তার যোগাযোগের একটি ঘাটতি দেখা দিচ্ছিল। যার মূল কারণ ভাষাগত পার্থক্য। সেখানে কর্তব্যরত বহু স্বাস্থ্য কর্মীসহ সিইও বাংলা জানেনই না। নার্সিংহোমের চুড়ান্ত অবহেলায় মারা যান সুজাতা দেবীর মা।
অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় সুজাতা। তিনি বিচারকদের কাছে আবেদন জানান, “আমার মাতৃভাষা বাংলা এবং ভাষা দিবষকে সন্মান জানিয়ে আমি এই মামলা বাংলাতেই করতে চাই”। অনুমতি দেন জাষ্টিস অসীম ব্যানার্জী। বাংলায় পিটিশন করার কারণে কোনো উকিল না পেয়ে নিজেই এই মামলা লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুজাতা। কেটে গেছে একব ছর। অবশেষে চলতি বছরের ১১ মার্চ সেই মামলায় জয় হয় সুজাতার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সুজাতা জানান, এই টাকা তিনি নেবেন না। তবে এই টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স গরিব মানুষদের জন্য দেওয়া হোক। সুজাতার এই উদার চিন্তাকে সম্মান জানিয়ে, বিচারক সেই রায়ই দিলেন। সুজাতার হাত ধরে জয় হল বাংলার।
বর্তমান সময়ে ইংরেজির রমরমা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অভিভাবকরাও ঝুঁকে পড়ছে বিদেশী এই ভাষার প্রতি। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল গুলিতে বাংলার গুরুত্ব যথেষ্ট কম। ফলে ধীরে ধীরে ছোটদের মন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা। তাই এই সময়ে দাঁড়িয়ে কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের কবিতাটি যেন বড্ড প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, “কী লাভ বলুন বাংলা পড়ে? বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে? বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না/ জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।”
Discussion about this post