আমরা সবাই মোটামুটি জানি যে এয়ারপ্লেনে যাতায়াতের সময় প্লেনের মধ্যে কত রকম সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয় ।এমনকি হঠাৎ বিপদের সম্মুখীন হলে যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য অনেক রকম উপায় রয়েছে। আছে ইমার্জেন্সি দরজা, জানালা, প্যারাশুট ইত্যাদি। কিন্তু আমরা একবারও ভেবে দেখিনা যে আমাদের ওই সফরের কান্ডারী যিনি সেই পাইলটের জন্য কি সুরক্ষার বন্দোবস্ত আছে? আদৌও আছে কিনা? কোনো বিপদ ঘটলে যতক্ষন না পর্যন্ত সমস্ত যাত্রী নিরাপদে সুরক্ষিত স্থানে যাচ্ছেন ততক্ষণ কিন্তু কান্ডারী নিজের সুরক্ষার কথা ভাবেন না। আজ না হয় একটু তাঁদের সুরক্ষার কথা নিয়ে বলি।
আমরা যদি একটি এয়ার প্লেনের গঠনাকৃতির ব্লু প্রিন্ট নিয়ে দেখি তাহলে দেখা যাবে পাইলটের আসনের পাশেই থাকে একটি কুড়ুল। আর ওটি হলো একমাত্র পাইলটের সুরক্ষার বন্দোবস্ত। এখন এটাই ভাবছেন নিশ্চই যে একটা কুড়ুল কীভাবে একটা মানুষের কাছে বিপদের সময় সুরক্ষার একমাত্র রাস্তা হতে পারে? আসলে যাত্রীদের যেমন ইমার্জেন্সি দরজা বা জানলা থাকে তেমন একটি ছোট্ট জানলা পাইলটের ঠিক মাথার ওপর থাকে। কিন্তু সেখানে থেকে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের বেরনো সম্ভব নয় তাই এই কুড়াল রাখা হয়, যাতে বিপদের সময় জানলা বা দরজা ভেঙে কান্ডারী তাঁর জীবন বাঁচাতে পারে। তবে এই ব্যবস্থা কিন্তু এয়ারলাইন্সে প্রথম থেকে ছিল না। একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এয়ারলাইন্সে এই ব্যবস্থাপনা করতে বাধ্য করে।
দিনটি ছিল ১৯৯৮-এর ২ সেপ্টেম্বর। সেদিন রাত ৮:৩০মিনিটে একটি সুইস এয়ারপ্লেন-৩৩৩ এয়ারপোর্ট থেকে টেক অফ করে। কিন্তু ঘন্টা খানেক পরেই প্লেনের ভিতর ধোঁয়া ভরে যায়। কেউই বুঝতে পারছিলেন না এই ধোঁয়ার উৎপত্তি কোথায় ?এই বিপদের মুহূর্তে যে ইলেক্ট্রিক সিস্টেমগুলো কাজে আসছিল না, সেগুলো বন্ধও করে দেওয়া হয়। এমনকি অটো পাইলট ও রেগুলেশন ফ্যানগুলোকেও বন্ধ করা হয়। পাইলট ম্যানুয়াল প্লেন চালাতে থাকেন। কিন্তু তাতেও সেই বিপদ কোনোভাবে আটকানো যায়নি। অল্প কিছুখনের মধ্যেই ওই গরম ধোঁয়া আগুনে রূপান্তরিত হয় আর পুরো বিমানে ছড়িয়ে পড়ে। এরকম অবস্থায় পাইলট যখন ম্যানুয়াল মোডে প্লেন চালাতে ব্যস্ত তখন ধীরে ধীরে সেই আগুন পাইলট কক্ষেও চেয়ে যেতে থাকে। ক্ষনিকের মধ্যেই ১০ হাজার ফিট উচ্ছতায় থাকা এই প্লেন ঘন্টায় ৫৫০ কিলোমিটার গতিবেগে একটি সমুদ্রে ক্র্যাশ করে। এটাতে কিন্তু না ছিল পাইলটের কোনো ত্রুটি না যান্ত্রিক ছিল পরিকল্পনাগত ত্রুটি। মূল ত্রুটি ছিল ওই ধোঁয়া অপসারণ করতে না পারা। যদি সেইরূপ কোনো ব্যবস্থা থাকত যার দ্বারা ধোঁয়া অপসারণ করা যেত তাহলে পাইলট সহজেই পার্শ্ববর্তী কোনো দ্বীপ বা রানওয়েতে ল্যান্ড করাতে পারতেন। এই মর্মান্তিক প্লেন দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে। এর পরেই সুইস এয়ারলাইন্স তাদের প্লেনের মধ্যে আনে নানান গঠনগত পরিবর্তন। এখনকার প্লেনে ধোয়ার সৃষ্টি হলে সেটা স্বয়ংক্রিয় ভাবেই বাইরে চলে যাবে। আর কোনো কারণে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রনেরও উপায় আছে । তার সঙ্গেই আমাদের যাত্রার কান্ডারী, পাইলটের সুরক্ষার জন্য তার সিটের পাশেই রাখা থাকে কুড়ুল।
Discussion about this post