শীতের দাপট কাটতেই মনোরম বসন্তের আগমন ঘটেছে মহা সমারোহে। শীতল বাতাসের সঙ্গে জুড়ছে রোদের নয়া তেজ। চারদিকে শীতঘুম থেকে সদ্য জাগা প্রকৃতির বুকে ফুলের মেলা, কান পাতলে শোনা যাচ্ছে কোকিলের কুহুতান। বলাই বাহুল্য ঋতুরাজ পূর্ণ অবয়বে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গের মাটিতে। ছলকে উঠেছে বসন্তের সঙ্গে হাওয়ায় প্রেমের রঙ। বসন্ত মানেই তো প্রেমের সাজ। সেই সাজে সজ্জিত চলতি বছরের পুরোদমে শুরু হওয়া ‘ভ্যালেন্টাইন উইক’। আজ, গোলাপ দিবস ও প্রস্তাব দিবস পেরিয়ে প্রেমপুজোর তৃতীয়া অর্থাৎ ‘চকোলেট ডে’।
ভালোবাসার মিষ্টি মোলায়েম বার্তা অন্য মনের কাছে পৌঁছে দিতে চকোলেটের জুড়ি নেই। দেশ, কাল, বয়সের বেড়াজাল টপকে চকোলেট ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে ও রূপে মন জয় করেছে সকলের। মিষ্টি চমক থেকে মানভঞ্জন, চকোলেটের জাদু নিমেষে পাল্টে দিয়েছে মন ও মেজাজের বাতাবরণ। তবে চকোলেট প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে শুধু জুড়ে থাকেনি, ইতিহাসের দলিলে ছাপ রেখেছে ব্যতিক্রমী ভূমিকাতেও। এমনই একটি সংবাদ চকোলেটের ‘সুইট ইমেজের’ ছক থেকে বেরিয়ে ইতিহাস প্রেমীদের মন জয় করেছে বিরল নজির গড়ে। সেই সত্যিকারের গল্প জানতে পাড়ি দিতে হবে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত কবি ছিলেন ব্যাঞ্জো প্যাটারসন। শুধু কবিই নন, ছিলেন সাংবাদিকও। ‘ওয়াল্টজি ম্যাটিলডা’, ‘দ্য ম্যান ফ্রম দ্য স্নোউই রিভার’র মতো বিশ্ব বিখ্যাত কবিতার মালিকের মালপত্রের মধ্যে বছর চারেক আগে পাওয়া যায় টিনের একটি বাক্স। এই টিনের বাক্স খুলতেই অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায় রুপোলি মোড়ক সমেত চকোলেট বার। টিনের ওপর মুদ্রিত রানী ভিক্টোরিয়ার আবক্ষ ছবি সহ ১৯০০-তে পা রাখা নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা। ইতিহাসবিদরা স্মৃতির সরণী দিয়ে ১২০ বছর পেছোতেই উন্মোচিত হলো একটা সত্যিকারের গল্প যার নায়ক স্বয়ং চকোলেট। ১৮৯৯-১৯০২ সালে সংগঠিত হয় বোয়ের যুদ্ধ। ব্রিটিশ সেনা ভয়ঙ্কর সেই যুদ্ধে প্রতাপ দেখিয়ে লড়ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। নতুন বছরে তাই রানী ভিক্টোরিয়া সেনাদের মনোবল বাড়াতে বিখ্যাত ক্যাডবেরি কোম্পানিকে টিনের বাক্সে এক লাখের ওপর চকোলেট প্রস্তুত করে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মুনাফা লাভ ও রানীর নেক নজরে আসার জন্য ক্যাডবেরির সামনে ছিল সুবর্ণ সুযোগ কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত চকোলেট কোম্পানি ক্যাডবেরি ছিল যুদ্ধবিরোধী। জনসাধারণের মধ্যে ‘ভালোবাসার মিষ্টি উপহার’ সরবরাহ করাই ছিল চকোলেট কোম্পানির লক্ষ্য। তাই সস্তা প্রচারের রাস্তায় না হেঁটে এবং সৈনিকদের খুশির কথাও চিন্তা করে ক্যাডবেরি টিনে ‘ব্র্যান্ডনেম’ না ছেপে চকোলেট বারে তা মুদ্রিত করে উৎপাদন মূল্যেরও কমে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠায়। ঐতিহাসিকদের মত অনুযায়ী নতুন বছরে রানীর বার্তাবাহক চকোলেট আস্বাদন না করে বহু সৈনিক সেই টিনের বাক্স নিজেদের প্রিয়জনদের পাঠিয়ে দেন। এমনই এক চকোলেটের টিন কবি ও সাংবাদিক ব্যাঞ্জো প্যাটারসন নিয়ে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাকিটা চকোলেটের ভুবন বিখ্যাত বাণিজ্যিক সংস্থার সামাজিক দায়িত্বের নজিরবিহীন ইতিহাস।
Discussion about this post