আজ মহালয়া,মা দুর্গার বরণ করার জন্য এটি আবার বছরের সেই সময়। বাঙালির প্রজন্মের কাছে একটি রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোরের ‘মহিষাসুর মর্দিনী’ অনুষ্ঠান। এটি প্রথম রেকর্ড হওয়ার আট দশক পরেও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সোনার কণ্ঠের সাথে এখনও কোনও তুলনা হয় না। যার উত্তেজনাপূর্ণ কণ্ঠ এমনকি মহান উত্তম কুমারও প্রতিস্থাপন করতে পারেন নি।
মহিষাসুর মর্দিনীর গল্পের স্মৃতি, বা ‘মহালয়া’ প্রোগ্রামটি যেমন জনপ্রিয় এবং তেমনই সার্বজনীনভাবেই সমস্ত বাঙালির কাছে পরিচিত। যে শিল্পীরা এটি তৈরি করেছিলেন তাঁরা হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণী কুমার, পঙ্কজ মল্লিক, জগেশ বসু, রায়চাঁদ বোড়াল – তারা সবাই ছিলেন রেডিও শিল্পী। অন্যদের চেয়ে আরও কিছু দক্ষতার সংমিশ্রণে, তারা কিংবদন্তি হয়ে উঠেছে। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ একটি বহুল প্রচারিত প্রাথমিক বাংলা রেডিও প্রোগ্রাম যা ১৯৩১ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে (এআইআর) প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটি হিন্দিতে অনুরূপ অর্কেস্ট্রেশনে অনুবাদ করা হয়েছে এবং একই সময়ে একটি প্যান-ইন্ডিয়ান দর্শকদের জন্য সম্প্রচারিত হয়। লাইভ-পারফরম্যান্স হিসাবে শুরু হওয়া প্রোগ্রামটি ১৯৬৬ সাল থেকে পূর্ব-রেকর্ড করা ফর্ম্যাটে প্রচারিত হয়েছে। এর দুর্দান্ত জনপ্রিয়তা আজও একই রয়েছে।
অনুষ্ঠানের পরিচালক ঠিক করলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি নায়ক উত্তমকুমার বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের বদলে পাঠ করবেন। অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু আদতে প্রোগ্রামটি চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিনে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে প্রচারিত হয়েছিল। এটিই প্রথম আর এটিই শেষ। মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বদলে অন্য কারও কণ্ঠস্বরকে বাঙালি মেনে নিতে পারেনি। এমনকি
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সংস্করণটি এত জনপ্রিয় ছিল যে মহানায়কের কন্ঠস্বরটি শ্রোতাদের কাছ থেকে অনুকূল সাড়া পেতে ব্যর্থ হয়। গোটা অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের দ্বারা প্রবল সমালোচিত হয়। এর ফলস্বরূপ মহালয়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সম্প্রচার পাকাপাকিভাবেই অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় আকাশবাণী।
Discussion about this post