কবি বলেছেন, ‘অন্তর হতে বিদ্বেষ-বিষ নাশো’। তবু সমাজে নারী বিদ্বেষী পুরুষ আর পুরুষ বিদ্বেষী নারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। যদিও হাতের পাঁচ আঙুলের মতোই সকলে সমান নন। সে বিদ্বেষের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে অত্যাচারিত হয়ে তাই আজ গোটা একটা গ্রাম জুড়ে শুধুই মেয়েরা। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি।
উত্তর কেনিয়াতে শুধুমাত্র মেয়েদের নিয়ে তৈরি একটি গ্রাম। গ্রামটির নাম উমোজা। ‘উমোজা’ কথার অর্থ হলো ‘ইউনিটি’। এ যেন ঠিক ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’র বাস্তব রূপ। ১৯৯০ সালে রেবেকা লোলোসলি নামে এক নারী মূল উদ্যোক্তা হয়ে তৈরি করেন এই গ্রামটি। তার সাথে ছিল আরও ১৫ জন নারী। জোর করে বিয়ে দেওয়া, স্বামীর হাতে অত্যাচারিত নারীদের জন্যই এই গ্রাম। রেবেকা নিজেও ছিলেন তার স্বামীর অত্যাচারের শিকার। আর এই অত্যাচারই তাকে শিখিয়েছে ঘুরে দাঁড়াতে।
উমোজা গ্রামের প্রতিটা বাড়ি তারা তৈরি করেন নিজের হাতে। খড়, মাটি, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে বাড়ি বানিয়ে তাতে বাস করেন মুক্ত নারীর দল। কিছু করে না দেখানো অবধি বোধহয় মেয়েরা বোঝে না যে তারা আসলে কি করতে পারে। তবে রেবেকারা করে দেখিয়েছে। অন্যদিকে, তাদের গোটা গ্রামের অর্থনীতি নির্ভর করে তাদেরই হাতের কাজের ওপর। নিজেরাই নানান রকম হাতের কাজ তৈরি করে বিক্রি করেন। তা দিয়েই চলছে জীবন নির্বাহ। তবে রেবেকা শুধু এই গ্রাম গঠনের উদ্যোগ নিয়েই থেমে থাকেননি। গ্রামে গড়ে তুলেছেন একটি স্কুলও।
তবে মেয়েদের বেড়ে উঠতে দেখলে বোধহয় সমাজের কষ্ট হয়। আর এই গ্রামের নিয়ম হলো সেখানে কোনো পুরুষদের প্রবেশাধিকার নেই। শুধুমাত্র গ্রামের কোনো সন্তানের বাবা হলে তবেই তিনি প্রবেশ করতে পারবেন। এ নিয়মের কারণ রেবেকার স্বামী একবার এই গ্রাম আক্রমণ করে। তবে সেবার কোনোভাবে টিকে যায় উমুজাবাসীরা। তবে এর পরই উমোজার পাশের এলাকায় কিছু পুরুষ বসবাস শুরু করে। তারা পরবর্তীতে আক্রমণ করে উমোজার নারীদের। তবে সরকারের সাহায্য নিয়ে মুক্তি পায় রেবেকারা। বর্তমানে রেবেকা এবং তার সাথীরা নিজেদের উপার্জনে পুরুষদের সেই এলাকা কিনে নেয়।
Discussion about this post