প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সংস্কৃতির নিরিখে ইউরোপের মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। ইউক্রেনে রয়েছে বহু সাধারণ গীর্জা, অর্থোডক্স গীর্জা, পুরনো ও সুরক্ষিত দুর্গ, উঁচু পাহাড় এবং কৃষ্ণসাগরের সৈকত। তবে পৃথিবীর অন্যতম রোমান্টিক জায়গা ইউক্রেনেই অবস্থিত। ইউক্রেনের পশ্চিমের ছোট্ট শহর ক্লাভেনে অবস্থিত তিন কিলোমিটার বিস্তৃত এক প্রাচীন রেলপথ। যা ‘টানেল অফ লাভ’ নামে পরিচিত। এই টানেলটিকে দেখতে ভিড় করেন সারা বিশ্বের বহু পর্যটকেরা। এখানকার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে #tunneloflove সহ Instagram-এ 11,000টিরও বেশি পোস্ট রয়েছে। ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৯ শতকের শুরুতে ইউক্রেনের এক সমৃদ্ধ প্লাইউড কারখানার সামগ্রী সরবরাহ করার জন্য তৈরি হয়েছিল এই ট্রেন লাইন।
তবে সেই সময়ে জঙ্গলে ঘেরা পরিবেশের মাঝে এই টানেল ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত বাহিনী সেখানকার একটি সামরিক ঘাঁটিতে সরঞ্জাম পরিবহনকে আড়াল করার জন্য রেল লাইনের দুইধারে ফ্লোরা ফুলের গাছ লাগিয়েছিল। সেই গাছ একসময় বড় হয়ে উপরে উঠে রাস্তার দুদিকে গাছ মিশে গেছে একে অপরের সাথে। ফলে তৈরি হয়েছে এই টানেল আকৃতি। আজও টানেলটি ব্যাবহার করা হয় কাঠের বিভিন্ন সামগ্রী পরিবহনের কাজে। এই কাঠ পরিবহনের ট্রেন দিনে তিনবার চলে। যার ফলে নির্বিঘ্নে এই টানেলের ভিতর হেঁটে বেড়ানো যায়।
এই টানেলটিকে ঘিরে রয়েছে এক অদ্ভুত বিশ্বাসের কাহিনী। স্থানীয়দের মতে, প্রেমিক যুগল ও দম্পতিদের কাছে এই টানেলটি একটি পবিত্র স্থান। কথিত রয়েছে, এই টানেল দিয়ে প্রিয় মানুষকে নিয়ে হাঁটলে দুজনের ভালবাসা চির অটুট থাকে। কোন প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল যদি এই পথটির উপর দিয়ে হাত ধরে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে যায় তবে তাদের মনের ইচ্ছে পূরণ হয়। তিন ঋতুতে প্রকৃতির তিন ধরনের সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় এই টানেলটি। গ্রীষ্মকালে টানেলের চারপাশের গাছের শুষ্ক পাতা ঝড়ে পড়ে এবং পাতা শূন্য হয়ে পড়ে টানেলটি। এরপর শীতকালে বরফের সাদা চাদরে ঢাকা পড়ে এই টানেলটি। তখন টানেলটিকে মনে হয় কোনো এক শ্বেত বরফের পথ। আর বসন্তকালে নতুন সবুজ পাতাতে ছেয়ে যায় টানেলটি। মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই টানেল পুরোটাই সবুজে পরিপূর্ণ থাকে।
তবে বিগত কয়েক দিনের বিধ্বংসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেন। রুশ সেনার বিরুদ্ধে দেশ রক্ষায় অস্ত্র নিয়ে পথে নেমেছে ইউক্রেনের বহু সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে প্রকৃতির প্রতি মানুষের এবং মানুষের প্রতি প্রকৃতির ভালোবাসার এই নিদর্শন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আর কতদিন সুরক্ষিত থাকবে তা একমাত্র সময়ই বলবে।
Discussion about this post