লোকসভা নির্বাচনের আগেই প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে পশ্চিমবঙ্গের বনবাসী জনতা বলে উঠলেন, “প্রধানমন্ত্রী শুধু ‘মন কি বাত’ না করে, যদি আমাদের মনগুলোকে বোঝার চেষ্টা করতেন তবে হয়তো অযোধ্যা পাহাড় কিম্বা সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে আজ আমাদের ছুটে আসতে হতো না কলকাতায়।” গত ৬ মার্চ ২০২৪, বাংলার সংগ্রামী বনগ্রামসভার আহ্বানে একটি বিনিময় সভা হল কলকাতার মহাজাতি সদনে। আগের দিন মধ্যরাত থেকে হাওড়া এবং শিয়ালদহ স্টেশনে জড়ো হয়েছিলেন আদিবাসিরা। সকালে মিছিল করে তাঁরা আসেন মহাজাতি সদনে। সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত চলে এই সভা।
সরকার ২০২৩ সালে একটি নতুন বিতর্কিত বনসংরক্ষণ আইন এনেছে। ২০০৬ সালের ভারতবর্ষের অরণ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট ভাষায় লেখা ছিল, ভারতবর্ষের কোনো বনাঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প করতে হলে, একটি নলকুপ বসাতে হলেও, সংশ্লিষ্ট বনাঞ্চলের মানুষের গ্রাম সভার মতামত নিতে হবে। নতুন আইনে এই গ্রাম সভাকে ‘বাতিল’ করে দিয়েছে সরকার। এদিন সভার একজন অংশগ্রহণকারী সুলেখা মান্ডি জানান, “এই জঙ্গল আমাদের পূর্বপুরুষের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই জঙ্গলের উপর নির্ভর করেই আমরা বেঁচে থেকেছি।’’ ফলে, জঙ্গলের এই অধিকার তাঁরা এত সহজে ছাড়তে পারবেন না। সেই সংক্রান্ত আলোচনার জন্যেই আয়োজিত হয়েছিল এই সভা।
সভার আয়োজকদের তরফে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি সুন্দর সিং রাভা জানান, “FRA-২০০৬ আইনে স্পষ্টভাবে গ্রামসভার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু সরকার কিংবা কোম্পানি তার তোয়াক্কা করে না।’’ দীর্ঘদিন ধরে এই আদিবাসিরাই অযোধ্যার ঠুর্গা বাঁচাও আন্দোলন চালিয়ে গেছেন, এই গ্রাম সভার হাত ধরেই। বামনি ঝরনায় হাইড্রোলিক প্রোজেক্টের সময় সরকার থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, এই প্রজেক্ট হলে চাকরি হবে, বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ পরিষেবা পাবেন আদিবাসীরা। কিন্তু চাকরি হয়নি, উল্টে তাঁদের বাসস্থানের জায়গাও নষ্ট হয়েছে। ফলে এই নতুন জঙ্গল আইন সম্পর্কে তাঁরা সন্দিহান।
আদিবাসিরা বলছেন আইনের দোহাই দিয়েই সেই কবে ব্রিটিশ সরকার তাঁদের জমি থেকে আলাদা করেছিল। তাঁদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। এককথায় তাঁরা নিজেদের বাসভূমিতে নিজেরাই হয়ে উঠেছিলেন রিফিউজি। নিজেদেরই জঙ্গল থেকে নিজেদের উচ্ছেদের স্মৃতি এখনও তাঁদের মনে ভীষণ স্পষ্ট, দগদগে ঘায়ের মত। তারপর দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তাদের অবস্থা যে খুব ভালো ছিল তাও নয়। স্বাধীন ভারতে এতদিন পরে তাঁরা আর নিজেদের জমি থেকে নতুন করে উচ্ছেদ হতে চান না।
Discussion about this post