‘দূষণ’ – ভীষণ পরিচিত একটি শব্দ এবং একটি ভয়ংকর সমস্যাও বটে। আমরা কম বেশি সকলেই এই বিষয়ে জানি কিন্তু চিন্তিত কি? খুব একটা বোধহয় নয়। তাই দিনের পর দিন দূষণ বেড়েই চলেছে। আর বাড়ছে দূষণের প্রভাব। নানারকমের দূষণের মধ্যে সবথেকে পরিচিত দূষণ হলো প্লাস্টিক দূষণ। প্লাস্টিক যে কতোটা অপরিহার্য তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না। প্রতিবছর প্রায় ১২ টন প্লাস্টিক আমরা সমুদ্রের বুকে ফেলি। আর সেই প্লাস্টিক খেয়ে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার জলজ প্রাণী। প্লাস্টিকের ব্যবহার কম করা খুব কঠিন একটি কাজ। তার প্রধান কারণ এটি উৎপাদন ভীষণ সহজ। এমনকি খুব কম খরচে এটিকে উৎপাদন করা সম্ভব।
তবে বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার কমিয়ে বাড়ানো হচ্ছে কাগজ এবং কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার। তবে তাতে কি খুব একটা লাভ হচ্ছে? হচ্ছে না। তার কারণ কাগজ তৈরি করতে গেলে কাটতে হয় প্রচুর প্রচুর গাছ। তাতে কি পরিবেশের খুব ভালো হচ্ছে? নৈব নৈব চ। পরিবেশ বাঁচাতে প্রচুর গাছেদের প্রয়োজন। এই সমস্যা তো গভীর। গাছ বাঁচানো হবে? নাকি প্লাস্টিক দূষণের হার কমানো হবে? তবে এর একটা সমাধান জাপান বের করে ফেলেছে। জাপানের এক সংস্থা বের করেছে এক অভিনব উপায়। তাহলে রহস্য উন্মোচন হোক!
কাগজ ব্যবহারের পর তা মাটিতে রোপণ করলেই তা থেকে জন্ম নেবে আস্ত গাছ! এও আবার হয় নাকি? আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। এই আশ্চর্য উদ্ভাবনীর পেছনে রয়েছে জাপানের পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানী মাইনিচি শিমবুনশা। ইনি হলেন ‘সবুজ সংবাদপত্র’ এর উদ্ভাবক তিনিই। সালটা ২০১৬, তারিখ ৪ মে। দিনটি ‘গ্রিনারি ডে’।এই দিনই শুরু হয়েছিল তাঁর এই লড়াই। ‘সবুজ সসংবাদপত্র ’ ঠিক কি নিয়ে? পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতেই এই বিশেষ সংবাদপত্রের সম্পাদনা শুরু করেছিলেন তিনি। ‘দ্য মাইনিচি’-খ্যাত সেই সংবাদপত্রই ছাপা হয়েছিল এই বিশেষ কাগজে। এটি ১০০ শতাংশ জৈব বিয়োজনযোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন ফুল গাছের দানা দিয়ে তৈরি হওয়ায় গাছের জন্ম দিতেও সক্ষম এই কাগজ। একেই বলে শাপে বর। ভুলবশত যত্রতত্র এই কাগজ ছড়িয়ে পড়লেও গাছ জন্ম নেবে সেখানে। তাছাড়াও এই কাগজ ‘রোপণ’ করাও যায় টবে।
সাউদার্ন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। প্রতি আমেরিকান নাগরিকের কাগজের চাহিদা মেটাতে গড়ে নাকি ৭টা করে গাছ কাঁটা হয় প্রতি বছরে। শুধু আমেরিকাতেই কাগজ তৈরির জন্য কাটা পড়ে বছরে প্রায় ২০০ কোটি গাছ। চক্ষু চড়কগাছ তো? হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, তা আলাদা করে বলার দরকারই নেই। সব কাগজ তো পরিবেশ বান্ধব নয়। তবে এই গ্রিন কাগজ কিন্তু যথেষ্ট পরিবেশ বান্ধব। এই কাগজের ব্যবহার বদলে দিতে পারে গোটা পরিস্থিতি। হ্যাঁ, মানছি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হবে না । কিন্তু কাগজ থেকে নতুন করে গাছ জন্মালে অনেকটাই সেরে উঠবে পরিবেশের ক্ষত। সেটা তো অস্বীকার করা যায় না।
Discussion about this post