“বল ভাই কি দাম দেবে, পুতুল নেবে গো পুতুল”– শ্যামল মিত্রের এই গানটির সঙ্গে আমরা অনেকেই বেশ পরিচিত। গানটা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে কোনো এক দুপুরে এক বিক্রেতা এই ডাক দিয়ে ফেরি করে বেড়াচ্ছে। তবে এই চিত্র আজ অনেকটাই বদলেছে। এখন বাচ্চাদের খেলার উপাদান হিসেবে পুতুল থাকলেও তার রূপ-গড়ন এমনকি নামও বদলে গেছে। বাংলার পুতুল মানে আজও টিকে থাকা একটি বিশেষ আঞ্চলিক ঐতিহ্য ও ইতিহাস মাখা মাটির পুতুল। আর মাটির পুতুল মানেই যে জায়গার কথা মাথায় আসে তা হল নদীয়ার কৃষ্ণনগর। তবে হাওড়াতেও যে এই ঐতিহ্যের নিদর্শন চাইলে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে তা কিন্তু অনেকেরই অজানা।
হাওড়ার হীরাপুরে মিলবে আজও টিকে থাকা এই ‘অমূল্য রতন’। নলপুর স্টেশনে নেমে যেতে হয় হীরাপুর বাজারে। সংলগ্ন আরো কয়েকটি জায়গায় এখনও মাটির পুতুলের সন্ধান মেলে। বিশেষ করে বিভিন্ন পালা পাব্বণে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীদের এই প্রয়াস। এমন অনেকজন আছেন যারা পারিবারিকভাবেই বয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের পূর্বপুরুষদের এই ব্যবসা। আবার অনেকের শুধুমাত্র অর্ডারি ব্যবসা।
মাটি দিয়ে তৈরি ঘাড় নাড়া পুতুল, বিভিন্ন পশুর চলন– এসব কিছুই তাদের ব্যবসার একেকটি প্রাণ। সেইসব পুতুল তৈরি করা, তা শুকোনো এবং তারপর রং করা। বিশেষ করে যেকোনো মেলার আগে এভাবেই ব্যস্তময় দিন কাটে মৃৎশিল্পীদের। তাদের ব্যবহারের মাধুর্য এবং আঞ্চলিক সংস্কৃতির প্রতি নিবিড় টান ক্রেতাদের আরও যেন বেশি করে আকৃষ্ট করে। আধুনিকতার নাগপাশে বাচ্চাদের পুতুল খেলার চল আজ অনেকটাই কমে এসেছে তবুও আমাদের বড়দের প্রয়াসে যদি এটুকু সংস্কৃতি ধরে রাখা যায় তাহলে ক্ষতি কী?
বাউড়িয়া রেলগেট পেরিয়েও যাওয়া যায় হীরাপুর বাজারে। সামনেই পড়বে গঙ্গা। গঙ্গার পাড় ধরে কিছুটা এগোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় বাজারে। হাওড়ায় যারা থাকেন তারা একটা দিন সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এই হীরাপুর বাজারে। খোদ হাওড়ার বুকে এমন মাটির পুতুলের জায়গা সত্যিই আশ্চর্যের! আমাদেরই দায়িত্ব তাদের পরিশ্রমের মর্যাদা কিছুটা হলেও রক্ষা করা।
চিত্র ও তথ্য ঋণ – সোমা মুখোপাধ্যায়
Discussion about this post