“আছে গৌর নিতাই নদিয়াতে” এ গান কে না শুনেছে! তবে নিতাইকে যিনি কৃষ্ণের অবতার হিসেবে ঘোষণা করেন তার কথা খুব কম লোকই জানে। এই মহাপুরুষ ছিলেন শ্রী অদ্বৈতাচার্য। ১৪৩৪ সালে শ্রীহট্টতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার দেওয়া নাম ছিল কমলাক্ষ। শ্রী অদ্বৈতাচার্য তাঁর বারো বছর বয়সে ন্যায় শাস্ত্র আর স্মৃতি শাস্ত্র পড়তে চলে আসেন শান্তিপুরে। শান্তিপুরের অন্তর্গত পূর্ণবাটী নিবাসী শান্ত বেদান্তবাগীশ নামক জনৈক অধ্যাপকের কাছে বেদচতুষ্টয় অধ্যয়ন করে তিনি ‘বেদ পঞ্চানন’ ও ‘অদ্বৈতাচার্য’ উপাধি লাভ করেন। এরপর থেকেই তিনি শান্তিপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে ওঠেন। বৈষ্ণবদের কাছে তিনি পুজিত হন মহাবিষ্ণু বা শিবের অবতার হিসেবে।
শান্তিপুরের বাবলায় অবস্থিত অদ্বৈতপাট। এ স্থান গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতাচার্যের মহা মিলনের সাক্ষী। অদ্বৈতাচার্যের দীক্ষা লাভ থেকে শুরু করে শচীমাতার তার নিতাইকে ভোজন করানো এই ভূমিতেই সম্পন্ন। আর এখানেই প্রতি বছর মাঘ মাসের শুরুর শুক্লপক্ষে মেলা বসে। শ্রীঅদ্বৈতাচার্যের জন্মতিথি উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন। দোল পূর্ণিমার পর সপ্তম তিথিতে দোল পালন করা হয়। এ পবিত্র স্থান রঙিন হয়ে ওঠে ভক্তদের সমাগমে।
বাবলায় অদ্বৈতপাটের এ মেলা বসে গোটা প্রাঙ্গণ জুড়ে। মেলার দিনে চলতে থাকে কীর্তন। মাঠে সার দিয়ে বসে খাবারের দোকান। প্রচুর বিদেশির ভিড় জমে অদ্বৈতপাটের মেলার মাঠে। প্রভুকে সাজানো হয় ফুলের সাজে। এ রূপ দেখে চোখ ফেরানো ভার। মন্দির প্রাঙ্গণ সেজে ওঠে নিজের তালে। শুধু অদ্বৈতাচার্যই নয় সঙ্গে পুজো চলে রাধাকৃষ্ণ আর প্রতিষ্ঠিত নারায়ণ শিলারও। কীর্তন শেষের দিন চলে খিচুড়ি বিলি। আগত সমস্ত ভক্তরা পেট পুরে গ্রহণ করেন এই প্রসাদ।
নদিয়ার পুণ্যভুমিগুলোর মধ্যে শান্তিপুরের বাবলা এক অনন্য জায়গা। কলকাতা থেকে আসতে গেলে শান্তিপুরগামী ট্রেনে চাপলে ২ ঘণ্টার পথ। শান্তিপুরে এসে স্টেশন থেকে অটো বা টোটো করেই পৌঁছে যেতে পারেন বাবলায়। শহরের কোলাহলকে একদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে ঘুরে আসতেই পারেন। সবুজে ঘেরা এই স্থান সতেজ নিঃশ্বাস নিতে আপনাকে নিরাশ করবে না।
Discussion about this post