কখনো ভাবতে পারেন কি একটি সারমেয় ছুটতে ছুটতে মঞ্চে এসে উপস্থিত হল! আর তার হাতে থুড়ি পায়ে তুলে দেওয়া হচ্ছে দ্য গ্রেট ‘অস্কার’! ব্যাপারটা শুনে অবাক লাগাছে নিশ্চয়ই কিন্তু এটাই তো স্বাভাবিক তাই না! বহু সিনেমা জুড়েই তো রয়েছে তাদের দূর্দান্ত সব কীর্তিকলাপ। এমনকি কিছু সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকে এরা। তবে তারা কেন বাদ পড়বে বলুন তো সিনেমা জগতের সেরার সেরা এই পুরস্কারটি থেকে? হ্যাঁ ঠিক এমনটাই ঘটতে চলেছিল সেদিন। একটি কুকুর তার অভিনয় দক্ষতার বিচারে নাম তুলে ফেলেছিল অস্কারের সেরার সেরা ওই তালিকায়। চলুন আজ তবে সেই সম্ভাব্য অস্কারজয়ী পোষ্যটির কিছু কৃতিত্বের ঝলক দেখে নেওয়া যাক।
১৯১৮সাল। গোটা পৃথিবী তখন কাঁপছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বোমা বারুদের আওয়াজে। সেই বছরেই ফ্রান্সের এককোণে জন্ম নিল ছোট্ট রিন টিন টিন। মার্কিন যুদ্ধসেনা লি ডানকানের ওর ওপর চোখ পড়তেই সস্নেহে তুলে নিলেন কোলে। নিজের কাছে রেখে আদর যত্নে একটু করেই বড় করে তুললেন ছোট্ট ওই কুকুরটিকে। পোষ্যটিও অল্পবয়স থেকেই সব কাজে বেশ চৌকস। আর তা দেখে ডানকানের অভিনেতা বন্ধু তো একরকম মন্ত্রমুগ্ধ। বন্ধুটি তাই স্থির করলেন যেভাবে হোক কুকুরটিকে তিনি তুলে ধরবেন রূপোলি পর্দায়। আর সে হিসেবেই ১৯২২ সালে রিন টিন টিন তাই প্রথম পা রাখল হলিউডে।
‘দ্য ম্যান ফ্রম দ্য হেলস রিভার’, ‘হোয়ার দ্য নর্থ বিগিনস’ নামের দুটি জনপ্রিয় ছবিও উপহার দিল সে হলিউডকে। একটা নয় দু’টো নয় মোট ২৩ খানা ছবির দৃশ্যে রিন টিন টিনের অভিনয় সাড়া ফেলে দিল চারপাশে। জনপ্রিয়তা এমনই পর্যায়ে পৌঁছল যে ভক্তদের ভিড়ও জমে উঠল রিন টিন টিনের অটোগ্রাফের চাহিদায়। আর স্টারের অটোগ্রাফ পড়ত তার পায়ের পাঁচ আঙুলের ছাপেই। এভাবেই একপা দু’পা করে যখন রিন টিন টিন শিখরের দিকে এগোচ্ছে তখনই অস্কার কমিটির আবির্ভাব ঘটল। প্রথম বছরের নির্বাচনও হল ভোটের মাধ্যমে। আর বললে অবাক হবেন, সবথেকে বেশি ভোটে জয়ী হয় ওই অবলা প্রাণীটিই। কিন্তু শেষমেষ পুরস্কার তার কপালে জোটেনি। কেন? কারণ সে যে নিতান্তই এক পশু, মানুষ যে নয়। তাই সমস্ত রকম দক্ষতার অধিকারী হয়েও রিন টিন টিনের অস্কার পাওয়া আর হল না।
১৯৩২ সালে চলে গেল রাশিয়ান এই কুকুরটি। চারিদিকে সেদিন শোকের ছায়া নেমেছে ভীষণরকম। দর্শকমহলের বুকেও হতাশা আর আক্ষেপের সুর। রাষ্ট্রীয় শোকের মাধ্যমে সম্মানও জানানো হয় রিন টিন টিনকে। হ্যাঁ অস্কার হয়ত ছুঁতে পারেনি সে কিন্তু তার অস্তিত্ব চিরকাল অক্ষত দর্শকদের মনে। আর এটাই হয়ত তার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
Discussion about this post