ভূগোলের পাতায় উল্লিখিত আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। মরুভূমিতেও যে কি পরিমাণ বৈচিত্র্য থাকতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ কালাহারি। বৃষ্টিপাতের দিক থেকেও বিচার করতে গেলে অন্যান্য মরুভূমির তুলনায় এখানে ভালোই বৃষ্টিপাত হয়। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন? এখানে যথেষ্ট বৃষ্টি হলেও জলের উৎস ক্ষণস্থায়ী।
মরুভূমির অসংখ্য প্রাণী মাইলের পর মাইল অতিক্রম করে শুধুমাত্র তৃষ্ণা মেটানোর আশায়। চলুন এমনই এক পাখির সাথে পরিচয় করা যাক। যারা শুধু নিজেদের তৃষ্ণা মেটাতে নয়, সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করে। নাম স্যান্ডগ্রাউস। এই প্রজাতির পাখিরা কঠোর থেকে কঠোরতম পরিশ্রম করে সন্তানদের বড়ো করার জন্য। মরুভূমির কেন্দ্রে শুষ্ক-রুক্ষ এলাকায় এদের বাস। তবে পরিণত স্যান্ডগ্রাউসরা এই পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে গেলেও কচি শরীর কি তা সহ্য করতে পারে! তাই পুরুষ অর্থাৎ বাবা পাখিরা দল বেঁধে দূরদূরান্তে পাড়ি দেয় জলাশয়ের খোঁজে।
তবে এই যাত্রা অনেক সময়ই বাধাহীন হয় না। পথে হয়তো বাজপাখিদের মত শিকারী পাখিদের সঙ্গে মারামারি করে কিছু সংখ্যক স্যান্ডগ্রাউস প্রাণ হারায়। তারপর যে কয়েকজন বেঁচে যায় তারা জলের দেখা পেলে তৃপ্তি ভরে জলপান করে। তারপর ছানাদের জন্য নিজেদের পেটের ভারী পালক ভিজিয়ে শুরু করে উড়ান। ছানাদের শুকিয়ে ওঠা গলায় সেই পালক দিয়েই জলের ছিটে দেয় স্যান্ডগ্রাউসরা।
উল্লেখ্য, সারা পৃথিবীতে ১৬ রকম স্যান্ডগ্রাউস প্রজাতির মধ্যে ছয়-সাত রকম প্রজাতি পাওয়া যায় ভারতেই। বাকিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বিশ্বের নানা প্রান্তে। এটি মূলত পায়রা কিংবা ঘুঘু জাতীয় পাখি। মরু প্রদেশে রুক্ষ পাথুরে প্রান্তরে ডিম পাড়ে স্যান্ডগ্রাউস। কাঠফাটা রোদ্দুর ও উপরন্তু শিকারী পাখিদের হাত থেকে বাঁচাতে মায়েরা বুক দিয়ে আগলে রাখে ডিমগুলোকে। তবে জলের অভাব মেটাবে কীভাবে? দূরের পথে তখনই ডানা মেলতে হয় স্যান্ডগ্রাউসদের। বলাই বাহুল্য, শত বিপত্তি সত্ত্বেও সন্তানদের প্রয়োজনের জায়গাটা বাবা- মায়েরা আজীবনই পূরণ করে আসে-সে মনুষ্য জাতি হোক বা পক্ষী! স্যান্ডগ্রাউসরা তারই যথার্থ নিদর্শন। বলা যায়, স্যান্ডগ্রাউস ছানাদের বেড়ে ওঠাটাই তাদের বাবা-মার কাছে তপ্ত রোদে এক পশলা বৃষ্টি তুল্য।
কভার চিত্র ঋণ – www.thayerbirding.com
Discussion about this post