আমরা জানি সময়ের সবচেয়ে ভালো ও খারাপ দিক হল যে সে পাল্টে যায়। আর এই সময়ের সাথেই পাল্টায় জীবন। কিন্তু এই সময় পাল্টানোর অপেক্ষা করতে পারেননা অনেকেই। খারাপ সময় তারা মনে করেন আর ভালো কিছু ঘটবে না। আর এই দৃঢ় বিশ্বাসই তাদের ঠেলে দেয় এক চরমতম সিদ্ধান্তের দিকে – আত্মহত্যার দিকে। কিন্তু আত্মহনন কখনই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারেনা। প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নামই হল জীবন। প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই থাকে এই জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা। যিনি এই সহজ কথাটিকে উপলব্ধি করে আত্মহননের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করতে পারেন তিনিই পান সফলতা। আজ এমন কজন মানুষের কথা বলব যারাও কোনো একসময় জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারাই তাদের ব্যর্থতাকে হারিয়ে পৌঁছেছিলেন জীবনের সাফল্যের শিখরে।
সেরকমই একজন হলেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। শান্তির জন্য নোবেল পান যিনি, তিনিই প্রথম আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার নিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন। সেই মানুষটাই জীবনের প্রথমপর্বে নিতে গিয়েছিলেন আত্মহত্যার মতো পদক্ষেপ। ১২ বছর বয়সে নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি গিয়েছেন প্যারেডের অনুষ্ঠান দেখতে। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন তার দিদা মারা গেছেন। এই ঘটনা শিশু মনকে এতটাই আহত করে যে তিনি চেয়েছিলেন নিজের জীবনটাই শেষ করে দিতে। সেদিন সেই কাজ তিনি করলে আর কখনই হয়ে উঠতে পারতেননা একজন বিশ্বখ্যাত নেতা।
একজন জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিত অপরা উইনফ্রে। টক শো উপস্থাপক, অভিনেত্রী, প্রযোজক ইত্যাদি পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি একজন সমাজসেবী। টক শো ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’-এর জন্য তিনি আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত। এই টক শো তাকে এনে দিয়েছে ১৫ বার এমি অ্যাওয়ার্ডও। তার ঝুলিতে আছে আরও অনেক স্বীকৃতি। এমনকি পরপর তিন বছর তিনি বিশ্বের অনন্য কৃষ্ণাঙ্গ কোটিপতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। তারও জীবনের শুরুটা খুব একটা সুখের ছিলনা। তিনি এক দরিদ্র পরিবারের জন্মান। কিশোরী বয়সে তাকে হতে হয় যৌন হেনস্তার শিকারও। পরবর্তী সময়েও তিনি নানা খারাপ অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন। যার জন্য একবার নয় দুই দুবার তিনি নিজের জীবনহানির চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্ধকার সময়ের শেষে তিনি দেখেছিলেন আলোর সন্ধান।
এবার আসি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ব্যাক্তির কথায়। তিনি হলেন মিকি মাউসের স্রষ্টা ওয়াল্ট ডিজনি। তারও জীবনের শুরুটা ছিল ব্যর্থতায় ভরা। নিজস্ব কল্পনাশক্তি না থাকার অভিযোগে বহিষ্কৃত করা হয় তার কাজ থেকে। তিনিও নাকি চেষ্টা করেছিলেন জীবন শেষ করে দেওয়ার। তবে সে কথা তিনি কোথাও স্বীকার করেননি। তিনি যদি আত্মহত্যা করে ফেলতেন তাহলে পৃথিবী হয়তো চিনতো না মিকি মাউসকে। আবার কখনও তৈরীও হতনা তার কল্পনা সৃষ্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড। তাদের এই জীবন কাহিনী থেকেই বোঝা যায় যে মানুষ নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করেন সে সাফল্য পাবেনই। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে ব্যর্থতা, দুঃখ যন্ত্রণা জীবনে আসা মানেই জীবনের ইতি নয়। বরং ঘোটে যাওয়া ভুলগুলোই হল আমাদের আগামী জীবনে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাওয়ার আসল চাবিকাঠি।
Discussion about this post