মকর পরব শেষ হলো ঠিকই। তবে বাঙালির উৎসবের কোনো শেষ নেই। দেখতে দেখতে গরমকে স্বাগত জানাতে চলে এলো গাজনের দিন। শিবের গাজন। চৈত্র মাসের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসবের। শাস্ত্র অনুযায়ী মানা হয় শিব ও শক্তির মিলনের এ আরেকটি বিশেষ দিন। তবে জানেন কি ‘গাজন’ নামটির উৎপত্তি হয়েছে ‘গর্জন’ থেকে?
এ নিয়ে রয়েছে ছোট্ট এক পুরান কথা। ঊষা ছিল অসুররাজ বাণের কন্যা। আর তার প্রেমিক অনিরুদ্ধ শ্রী কৃষ্ণের পৌত্র। এ প্রেমের কথা বাণরাজ জানলেও মানতেন না। বাণরাজ অনিরুদ্ধকে বন্দি করলে শ্রী কৃষ্ণের সাথে তার একচোট যুদ্ধ হয়ে যায়। পরাজিত বাণরাজ মৃত্যু আসন্ন জেনে উৎসর্গ করেন নিজেকে। আর সে সময়ে তার একটাই প্রার্থনা ছিল। তার প্রার্থনা এই ছিল যে তার মৃত্যুদিনে ভেদাভেদ মানা চলবে না। সবাই এক আসনে বসবে। এ প্রার্থনা শুনে শ্রী কৃষ্ণ তা মঞ্জুর করেন। অগত্যা উৎসবের কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই দিনটি। অসুররা হয়ে ওঠে সন্ন্যাসী।
অবশ্য এর সবটাই লোকের মুখে শোনা কথা। শোনা যায় সন্ন্যাসীরা ব্রহ্মচর্য পালন করেছিলেন। সেই ব্রহ্মতেজেই প্রচণ্ড গর্জন করেছেন সংক্রান্তিতে। সেই গর্জনের ধ্বনি ছিল হর হর মহাদেব। আর গর্জনেরই অপভ্রংশ হিসেবে ধরা হয় গাজনকে। ঠিক তেমনই ‘চক্র’ থেকে এসেছে চড়ক। যা কিনা বিশাল মাপের গাজনের সংক্ষিপ্ত লোকাচার। তবে এ অনুষ্ঠানে আজও ব্রাহ্মণ অনুপস্থিত।
বাংলায় এ উৎসব শুরু করেছিলেন রাজা সুন্দরানন্দ ঠাকুর। সময়টা ১৮৪৫ সাল। তারপর থেকে সন্ন্যাসীরাই প্রজা হয়ে চলতে থাকলো পুজো। নিয়ম বেশ ব্যতিক্রমী। মাঠের মাঝে বিশাল আকারের একটি গাছ থাকে। চড়ক গাছ। মাঝখান থেকে নিচের দিকে বাঁকানো একটা দণ্ড মূল গাছ থেকে ঝোলানো হয়। তার দু প্রান্তে সন্ন্যাসীরা পিঠে বড়শি গেঁথে ঘোরে। আর তার সাথে চলে পুজো। কোথাও কোথাও পুজো উপলক্ষে মেলা বসে মাঠ জুড়ে। কোনো এক সময়ে ব্রিটিশ সরকার এ পুজো বন্ধ করে বলে শোনা যায়। তবে ধর্মীয় বাঁধা আর কে কবে মেনেছে! তাই সব বাধা নিষেধকে পরোয়া না করে আজও সবাই মেতে ওঠে গাজন উৎসবে।
Discussion about this post