বাংলাদেশের রাজধানী তথা মহানগরী ঢাকা হল সারা দেশের বাণিজ্যিক ও সংস্কৃতির আখড়া। অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তাদের সংগ্রহশালার নিদর্শন মেলে ঢাকার বিভিন্ন অলিতে গলিতে। ঠিক তেমনই পুরনো ঢাকার একটি চমকপ্রদ বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে গড়ে ওঠা ফরাসী বণিকদের স্মৃতিবিজড়িত ফরাশগঞ্জ। তবে এই নাম হওয়ার পিছনেও রয়েছে এক গল্প। নাম শুনেই বোঝা যায় এর মধ্যে রয়েছে ফরাসী ফরাসী গন্ধ! কারণ এই শব্দের আক্ষরিক অর্থই হল ফরাসীদের গঞ্জ বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
১৭৫০ সালের দিকে ফরাসীরা বাংলায় আসে। তারা এসে ফরাশগঞ্জ ভ্রমণ করে এবং ব্যবসা করার জন্য তাদের এই জায়গাটি বেশ পছন্দ হয়। তাই দেরি না করে বণিকরা বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এলাকাটিকে বিশেষভাবে গড়ে নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের ছোট্ট একটি গঞ্জ, যা আদতে ফরাশগঞ্জ হিসেবেই আজ পরিচিত। এই বাণিজ্যকেন্দ্রে সেই সময় থেকেই গড়ে উঠে হলুদ, আদা, রসুন, মরিচের পাইকারী বাজার, যা এখনও টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
এখানেই শেষ নয়, ফরাসী বণিকরা ১৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকের এই অঞ্চলে একটি বাজার গড়ে তোলেন। বর্তমানে তা শ্যামবাজার নামেই বেশি পরিচিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব কিছু বুড়িগঙ্গা নদী দিয়ে শ্যামবাজারে আসে। এখন এখানে বেশ কম দামে টাটকা সবজি, মসলা, তরি-তরকারি, ফল ইত্যাদি পাওয়া যায়। আঠারো শতকে ঢাকা থেকে মসলিন কাপড়, রুমাল ও মোটা কাপড় ইউরোপসহ পশ্চিমী বেশ কিছু অঞ্চলে রপ্তানিও করা হত।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, বিপুল অর্থ ও ধনসম্পদের মালিক ছিলেন ফরাসী বণিকরা। কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ফরাসীরা তাদের কুঠি, ব্যবসা বেচে দিয়ে চলে যায়। তবে তারা চলে গেলেও ফরাশগঞ্জ কিন্তু টিকে গেছে কালের ক্রমে। ঠিক যেমন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বুড়িগঙ্গা নদী। আর এই নদীর উত্তর তীরে গড়ে ওঠা– শ্যামবাজার ও ফরাশগঞ্জ আজও বয়ে নিয়ে চলেছে পুরনো ঢাকায় গড়ে তোলা ফরাসীদের সব প্রাচীন স্থাপনা।
তথ্য ও চিত্র ঋণ – আজিম খান তুহিন
Discussion about this post