The Slogans That Changed our Destiny
ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে নানান সময়ে আমরা নানা আন্দোলন হতে দেখেছি। শুধু ইতিহাসের পাতাতেই নয়, বর্তমান সময়েও নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নানা আন্দোলন , প্রচার ও বিরোধ। ভালো করে সেসমস্ত আন্দোলন বা প্রচারকে লক্ষ্য করলে আমরা বুঝতে পারব সেগুলিকে ঘিরে তৈরি হয় কোনো না কোনো স্লোগান। এই স্লোগানের জন্যই মানুষ উদ্বুদ্ধ হন আর এগিয়ে যান আন্দোলনের পথে। বর্তমান রাজনীতির ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু বিখ্যাত স্লোগান। ঠিক তেমনই স্বাধীনতার প্রাক্কালেও বিখ্যাত হয়েছিল তেমনই কিছু স্লোগান। স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরে ফিরে দেখা যাক সেরকমই কিছু স্লোগানকে।
আমাদের কাছে সুপরিচিত যেসব ঐতিহাসিক স্লোগান তারই মধ্যে অন্যতম হল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। খুঁজে দেখলে জানা যাবে এটি কিন্তু আসলে পার্সি শব্দবন্ধ। ১৯২১ সালে উর্দু কবি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা মৌলানা হরসৎ মোহনী এটিকে প্রথম স্লোগান হিসাবে ব্যাবহার করেন। যার অর্থ হলো বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। পরবর্তীতে ভগৎ সিং তাঁর বক্তৃতা ও লেখার মাধ্যমে এই স্লোগানটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৯২৯ সালের জুন মাসে দিল্লী হাই কোর্টে পর্যন্ত এই স্লোগান ধ্বনিত হয়। এই স্লোগান বহু বিপ্লবীকে বারংবার বিপ্লবে অংশ নিতে উজ্জীবিত করে।
ইনকিলাব জিন্দাবাদই কেবলমাত্র একটা স্লোগান নয় যা ভারতীয়দের মধ্যের জাতীয়তাবাদের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। এই তালিকায় আছে আরও এরকম অনেক স্লোগান। সেরকমই একটা স্লোগান হল ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ যার বাংলা অর্থ হলো করবো নয়তো মরবো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পৃথিবী যখন প্রায় দ্বিবিভক্ত সেই সময়ে ভারতও যেন তার পুরনো দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে বেশি মাত্রায় উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল। এমতাবস্থায় ১৯৪২ সাল নাগাদ ভারতে আসেন স্ট্রাফর্ড ক্রিপস। তিনি যুদ্ধে ভারতীয়দের সমর্থনের বিনিময় তাদের কর্তৃত্বের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলেন পূর্ণ স্বরাজ। এই পটভূমিতেই গান্ধীজি দেশবাসীর উদ্দেশে স্লোগান দেন ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। সেবছরই আমাদের দেশে শুরু হয়ে যায় ভারত ছাড়ো আন্দোলন। এই দেশজোড়া আন্দোলনকে আরও তীব্রতর এবং বিপ্লবীদের যেন আরো উৎসাহিত করেছিলাম গান্ধীজির সেই স্লোগান। একদিকে মহাত্মা গান্ধী যেমন সত্যাগ্রহের দ্বারা সমাজকে রূপান্তর করতে চান। তেমনই সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁর “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” স্লোগানের মাধ্যমে ভারতকে পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্তির আশা দেখিয়েছিলেন।
এই আন্দোলন আহ্বানের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃত্বকে গ্রেপ্তার করা হয়। ব্রিটিশরা ভেবেছিল নেতারা না থাকলে বিপ্লবীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে এবং আন্দোলনও দমন করা সম্ভবপর হবে। কিন্তু তারা যা অনুভব করতে পারেননি তা হল ভারতীয় মধ্যে জ্বলতে থাকা স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্খা ও তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া নেতাদের দেওয়া স্লোগানের প্রভাব। এর ফলে অভিভাবকহীন ভাবেও চলতে থাকে এই তীব্র আন্দোলন।এছাড়াও আছে ‘সত্যমেব জয়তে’র মতো স্লোগান। যার উল্লেখ মেলে মুণ্ডক উপনিষদে। স্বাধীনতার পূর্বে যা জনগণের মধ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন বাল গঙ্গাধর তিলক বলেন, “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার, আমি তা অর্জন করবই।” যা কেবল দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল তাই নয়, তাদের মনে দেশের প্রতি ভালোবাসারও সঞ্চার করে। স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ যুদ্ধে এরূপ আরও বহু স্লোগান ও উক্তি আছে যার তালিকা করতে বসলে শেষ করা প্রায় অসম্ভব।
বর্তমান রাজনীতিকে যেমন প্রভাবিত করে নানা রাজনৈতিক দলের দ্বারা প্রচারিত নানা স্লোগান। ঠিক তেমনই দাসত্বের শৃঙ্খল মোচন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে যেসব স্লোগান আমাদের পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিল; সেগুলোর কথাও আমাদের ভুললে চলবে না।
Discussion about this post