সারা স্টেশন চত্বর, স্টেশনের বাইরেও বহুদূর পর্যন্ত নেই কোনো বইয়ের দোকান। এই একটিই। বেশ পুরনো দোকানটিতে নিয়মিত খদ্দেরদের আড্ডা তো আছেই, আছে নতুনদের ভিড়ও। পত্র, পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন, পড়াশোনার বই, চাকরির পরীক্ষার বই, বাংলা ইংরেজি সাহিত্যের বই সবগুলিই মেলে এই দোকানে। সন্ধ্যে হলেই বয়স্কদের গলাখাঁকারি, ট্রেনের হুইসিল, মানুষের পায়ের শব্দ, কোনো পড়ুয়ার চাকরির ফর্ম ফিলআপের ব্যস্ততা; এই সমস্ততেই অভ্যস্ত দোকানটি বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। বন্ধ করে দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
শ্রীরামপুর রেলওয়ে স্টেশন বুকস্টল চালু হয়েছিল ১৯৭১ সালে। দীর্ঘ ৫৩ বছরের ইতিহাসকে ফিরে দেখতে গিয়ে চোখে জল আসে বর্তমান মালিক অভিষেক জৈনের। প্রথম থেকে দোকান ঠিকঠাক চললেও, পাঁচ বছর আগে রেলের নতুন পলিসি আসে। তাতে বলা হয়েছিল রেলের জমিতে তৈরি দোকানগুলিকে এমপিএস স্টল বা মাল্টিপারপাস স্টল করে দিতে হবে। সেই সমস্ত মানার পরে সব ঠিক চলছিল। মাঝের বছরগুলিতে কাগজপত্র নিয়মমত রিনিউও হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি রেল জানিয়েছে দোকান খালি করে দিতে হবে। কিছু সময় আইনি লড়াই করে অভিষেক বাবু আজ ক্লান্ত, তিনি দোকানের চাবি রেলের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিষেক বাবু বলছেন মৃদুল দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে, শ্রীরামপুরের আশেপাশে এমন কোনো লেখক, সাহিত্যিক, কবি নেই; যাঁরা তাঁর দোকান চেনেন না। সজল চোখে তিনি জানালেন, “অন্য কাজ করে আমি চালাতে পারব, সেই ক্ষমতা আমার আছে, সেই নিয়ে চিন্তাও নেই। কিন্তু একটা বইয়ের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে? মানুষ তো এমনিতেই আর বই পড়েনা, একবার বন্ধ হলে, আর কী চালু করা যাবে?” এই বিষয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের প্রতিক্রিয়া চাইলে তিনি জানান, “এতে এত ভাবনার কিছু নেই, পুরনোকে ফেলেই তো নতুন কিছু আসে।’’
Discussion about this post