তেল-জলের না মেশার প্রবাদ তো বাঙালির নিত্যদিনের রসবোধের অঙ্গ। কিন্তু জলে জলে না মেশার প্রবাদ শুনেছেন কখনও? তবে এই অঞ্চলের মানুষ তো তেল-জল থেকে জলে-জলের প্রবাদেই বেশী সাবলীল। কলকাতা থেকে প্রায় ১৩০ কিমি দূরে অবস্থিত শ্রী মহাপ্রভুর জন্মস্থান নবদ্বীপ ধাম এই জায়গাটি। যেখানে মিলিত হয়েছে, ঘোলাটে হালকা হলুদ আভার ভাগীরথী ও সবুজাভ জলঙ্গী নদী। সূর্যের আলোয় সেই হলদে আভা রূপ নেয় গেরুয়া বর্ণের। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন, প্রকৃতি নিজের হাতে এঁকে দিয়েছে বৃহৎ এক জাতীয় পতাকা।
জলঙ্গী নদী,অতীতে যার নাম ছিল খড়ে নদী। নদীটি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এরপর তা নদীয়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নবদ্বীপের কাছে ভাগীরথীতে মিলেছে। জীবনানন্দ দাশের কবিতা- “আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালবেসে, জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।” আবার সত্যজিৎ রায়ের “অপুর সংসার” সিনেমার অনেকটা অংশই কৃষ্ণনগর শহরের নিকট জলঙ্গীর পাড়ে তোলা হয়েছিল।
নবদ্বীপের যে স্থানে ভাগীরথী-জলঙ্গী মিলিত হয়েছে সেখানে এই দুই রং,সবুজ ও হলুদের ভাগাভাগি স্পষ্ট বোঝা যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে,কচুরী পানার আধিক্যের জন্য ই জলঙ্গীর জল সবুজাভ।অন্যদিকে,ভাগীরথী নদীর ফারাক্কা থেকে মায়াপুরের মধ্যে আরো অনেক নদী ও খাল এসে মিশেছে।সম্ভবত এই কারণে ভাগীরথী নদীর জল একটু বেশি ঘোলা। তবে এই জল একসঙ্গে যে মেশে না তা ঠিক নয়।কারন কলকাতাতে হুগলী নদীতে এই দুটি ধারা আলাদাভাবে বোঝা যায় না। তাই যারা নবদ্বীপ কিংবা মায়াপুর ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। লক্ষ্য রাখবেন যেন প্রকৃতির এই লীলাখেলা দেখা বাদ না পড়ে যায়। অবশেষে নবদ্বীপের নাম মুখে এলে এই দুটি শব্দ না বলে শেষ করলেই নয়। শ্রী মহাপ্রভুর মধুর শব্দ – “হরে কৃষ্ণ।”
চিত্র ঋণ – http://mntravelog.com/
Discussion about this post