বর্তমান প্রজন্মে একটি অতি পরিচিত ও সহজলভ্য অসুখ হল, মানসিক অবসাদ। কেরিয়ারের ব্যর্থতা, বাড়ির লোকের অযথা চাপ, ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে যাওয়া কিংবা চরম বিশ্বাসঘাতকতা। এমন হাজারো কারণই দায়ী মানসিক অবসাদের জন্য। আর এর অন্তিম পরিণতি হল আত্মহত্যা।অবসাদের চরম মূহুর্তের সিদ্ধান্ত। মানুষ তার বাঁচার কারণ হারিয়ে ফেলে। মৃত্যু অনেক সহজ হয়ে পড়ে ঐ মূহূর্তে। তখনই যদি কাঁধে এক বন্ধুত্বের হাত পড়ে, তবে হয়ত তাকে নতুনভাবে বাঁচা শেখানো যায়। হ্যাঁ, এমনই একজন মানুষ হলেন ডোলান্ড টেলর রিচি। ডন নামেই পরিচিত। রোজ তিনি আড়ি পাতেন সুইসাইড স্পটে। আর কোনো ব্যক্তিকে মানসিক অবসন্ন অবস্থায় দেখলেই, তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যেতেন। স্ত্রী ময়া ও ডন তার সাথে বসে গল্প জুড়তেন। ভাবছেন তো এও কি সম্ভব ? অসম্ভব বলে যে কিছু নেই প্রমান করলেন।
নাহ, তিনি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নন। নন কোনও আত্মহত্যা আটকানোর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি। এক সাধারণ জীবনবীমা কোম্পানির সেলসম্যান। কেবলমাত্র অভিজ্ঞতা আর হাসিমাখা মুখের সারল্যেই বহু মানুষের জীবন ফিরিয়েছন তিনি। ডন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা। সিডনির ওয়াটসন্স বে শহরের কাছে ছিল বাড়ি। বাড়ির সামনে সুবিশাল তাসমান সাগর। ধার ঘেঁষে পাথুরে বাঁধ। তার পাশেই একটি খাদ, নাম ‘দ্যা গ্যাপ’। খাদের ধারে রয়েছে একটি তিন ফুট উঁচু রেলিং। এক নৈসর্গিক পরিবেশ। কিন্তু এই পরিবেশের সৌন্দর্য একরকম কলঙ্কিত। কারণ এটি একটি ‘সুইসাইড স্পট’।
ডন প্রতিদিন সকালে উঠে ড্রয়িংরুম থেকে নজর রাখতেন ঐ রেলিং এর ধারে। সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তিকে দেখলেই ছুট লাগাতেন। তার কাছে গিয়ে শান্ত স্বরে বলতেন, “এক্সকিউজ মি! আমি কি আপনাকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি?” এরপর সেই অপিরিচিত ব্যক্তিটিকে আতিথেয়তা করে বাড়ি আনতেন। চা বা বিয়ার দিয়ে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও করতেন। এইভাবেই ডন ও তাঁর স্ত্রী ময়া পৌঁছতেন অবসন্ন ব্যক্তির মনের গোপন জায়গায়। বন্ধুর মতো সহজ করে নিতেন অচেনা ব্যক্তির সাথে আলাপচারিতাটা। প্রায় চারশো থেকে পাঁচশো ব্যক্তিকে এইভাবে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন তিনি।
তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে বাঁচাতে অক্ষমও হয়েছেন। কিন্তু যাদের তিনি বাঁচিয়েছেন, ‘দেবদূত’ ছিলেন ডন তাদের কাছে। জীবন স্রোতে ফিরে সাফল্য পেলে ডনকে তারা ধন্যবাদও জানাত। তাঁর এই মহৎ কাজের জন্য বহু পুরস্কারও পেয়েছেন। ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ডে কাউন্সিল তাকে ‘বর্ষসেরা স্থানীয় নায়ক’ এর সম্মান দেয়। তবে তাঁদের কাছে পুরস্কার ছিল একজনের জীবনকে রক্ষা করতে পারা। তিনি মজা করে বলতেন, “আমি তো একজন সেলসম্যান ছিলাম। আর তাই ওদেরকে ওদেরই জীবন বিক্রি করেছি”। ২০১২ সালে ৮৬ বছর বয়সে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। যদিও নিজের জীবনের শেষ দিন অবধি মানুষের পাশে ছিলেন তিনি।
চিত্র ঋণ – Personal Excellence, Restore Democracy
Discussion about this post