আজকে আপনাদের জানাবো এক অন্যরকম ‘রাজা’র গল্প। তবে এ গল্প কাল্পনিক নয়। এই রাজা ভারতের বাসিন্দা নন, তিনি থাকেন সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পাড়ে। ব্রাজিলের মার্সিও মিজায়েল ম্যাটোলিয়াস স্থানীয়দের কাছে পরিচিত ‘বালির রাজা’ বা ‘রাজা মার্সিও’ নামে। আপনাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে বালির রাজা কেন? বালির রাজা কারণ তিনি যে বসবাস করেন এক বালির তৈরী দুর্গতে। রিও ডি জেনেইরোর বাররা দ্য টিজুকা সমুদ্র সৈকতে মার্সিও নিজেই তৈরী করেছেন তার বালির দুর্গ।
মার্সিও যে কেবল তার বালির দূর্গর জন্যই রাজা আখ্যায় ভূষিত হয়েছেন তা কিন্তু নয়। রাজার মতই তার কাছেও রয়েছে মুকুট এবং রাজদণ্ড। দুর্গের সামনে আছে তার নিজের বানানো সিংহাসন। জানা যায় মার্সিওর বেড়ে ওঠা গুয়ানাবার উপসাগরের তীরেই। ম্যাটোলিয়াস এক জায়গায় জানিয়েছেন যে তিনি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে ও স্প্যানিশ স্থপতি অ্যান্টনি গোডিরালের এক বই পড়ার মাধ্যমে দুর্গ তৈরীর কৌশল জেনেছেন। এই কাজ ছাড়াও বালির রাজা নানা ধরনের বই পড়া ও বই সংগ্রহের শখ রাখেন। যদিও মার্সিওর দুর্গ খুব বেশী বড় নয়, তবে রাজামশাইয়ের কাছে তাই যথেষ্ট। সেখানে তার শোবার ঘরে যেমন রয়েছে কাঠের বিম দিয়ে তৈরি বই রাখার জায়গা। তেমনি দুর্গের ভিতরে রয়েছে একটি ছোট্ট রান্নাঘর, তার জিনিসপত্র রাখার জায়গা সবই। তবে সে দূর্গে বাথরুম তৈরী করা তার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেহেতু গরমকালে বালি প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে, তখন তাপমাত্রা পৌঁছায় ৪০° সেলসিয়াসে। তাই গ্রীষ্মের রাতগুলো সে কাটায় বন্ধুর বাড়িতে। তবে সমুদ্রের তীরে অবস্থিত হওয়ায় এই দুর্গ সংরক্ষণ করতে তাকে যথেষ্ট কাঠখড় পোহাতে হয় আবার ঝড় জলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নিজের হাতেই মেরামত করে নেন মার্সিও।
বালির রাজা হয়েও রাজামশাইয়ের যেহেতু রাজ্যপাট নেই তাই তার দিন যে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে কাটে তেমনটা কিন্তু নয়। তার এই অসাধারণ শিল্প প্রতিভা দেখে অনেক সময়ে স্থানীয় শপিংমলগুলো থেকে তার ডাক পড়ে সেগুলোকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার জন্য। এই কাজের জন্য মার্সিও যা পরিশ্রমিক পান তা দিয়েই তার দিনযাপন হয়। তাছাড়া মার্সিওর বিরল সৃষ্টিকর্ম দেখে পর্যটকরা তার সাথে তোলেন ছবি, আর মার্সিও পোজ দেন স্বেচ্ছায়। তবে তার এই শিল্পকর্মকে ফ্রেমবন্দী করার জন্য মার্সিও কখনও দাবী করেন না কিছুই। পর্যটকরা খুশি হয়ে তাকে যা দিয়ে যান তিনি তাই হাসিমুখে গ্রহণ করেন। মার্সিওর এক বিশেষ গুণ আছে। সেটি হল তার নিজের সংগ্রহের দেশী বিদেশী বইগুলো কেউ কিনতে আগ্রহী হলে তিনি তাকে বই বিক্রি করেন ঠিকই তবে তা কোনো নির্ধারিত মূল্যের বিনিময় নয়। আবার কেউ তা দিতে না পারলে তাকে উপহার হিসাবেও দিয়ে দেন কিং মার্সিও।
বর্তমান যুগে আমরা যখন আনন্দ সুখ খুঁজি বাজার চলতি জিনিসের মধ্যে। সেই সময়ে মার্সিওর মতো মানুষও আছেন যারা খুব সাধারণ জিনিস দিয়েও তৈরী করতে পারেন ব্যতিক্রমী জগৎ। আর সেই জগৎ থেকেই খুঁজে নিতে পারেন তাদের ভালোলাগা গুলোকে।
Discussion about this post