সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপনে প্রতি বছরই মেতে ওঠে গোটা দেশ। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক দিনটি দেশের আজীবনের সম্পদ। আর সেই সাথে রয়েছে ভারতীয় সংবিধান। ভারতের আসল হস্তশিল্পিত সংবিধান আজও সংরক্ষিত আছে নয়াদিল্লির ভারতীয় সংসদ লাইব্রেরিতে। একটি বিশেষ হিলিয়াম ফিল্ড কেসের মধ্যে করা হয়েছে এই সংরক্ষণ। সংবিধান সম্পর্কে অনেকে অনেক কিছুই জানেন। কিন্তু তবু অজানা থেকে যায় এর কারুকাজে অবদান রাখা পাঁচ কন্যার কথা।
একেবারে প্রথমে কালো চামড়ায় বাঁধানো ছিল এই সংবিধান। আর তার ওপরে ছিল সোনালি কারুকাজ। সংবিধানের এই কাজ বয়ে এনেছিল সমৃদ্ধি। এত কাজের পরে এর প্রতিটি শব্দের ক্যালিগ্রাফি করেছিলেন প্রেম বিহারী নারায়ণ রায়জাদা। তবে বইটিকে আরও সাজিয়ে তোলার ভার পেয়েছিলেন নন্দলাল বসু এবং তাঁর ছাত্রদল। যিনি ছিলেন শান্তিনিকেতনের কলা ভবনের কিংবদন্তী শিল্পী। এ ছাত্রদলের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা শিল্পী। যাদের মধ্যে পাঁচ জনের নাম উল্লেখযোগ্য। প্রথমেই আসে গৌরী দেবীর কথা (গৌরী ভঞ্জ)। যিনি ছিলেন স্বয়ং নন্দলাল বসুর বড় মেয়ে। রবি ঠাকুরের কথায় তিনি ভর্তি হয়েছিলেন শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। পরে নন্দলাল বসু শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হলে গোটা পরিবার বোলপুরে চলে আসে। এরপর আসে যমুনা সেন। গৌরী দেবীর বোন যমুনা ছিলেন নন্দলাল বসুর ছোট মেয়ে। তিনিও পিতার পথেরই পথিক। ১৯৩০-এর গোড়ার দিকে ছাত্রী হিসেবে কলা ভবনে যোগদান করেন তিনি। শুধুমাত্র তাঁর বাবা নন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও প্রশংসা করতেন তাঁর কাজের।
বাকি তিন কন্যার মধ্যে একজন ছিলেন নিবেদিতা বোস। যিনি তনয়েন্দ্রনাথ ঘোষের কন্যা। রবি ঠাকুরের থেকে অনুপ্রাণিত ছিলেন তিনি। সেই থেকেই মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন নিবেদিতা। আর সংবিধানের কাজের আরেকজন সাথী ছিলেন অমলা শঙ্কর। পাঠভবন, সঙ্গীত ভবন এবং কলা ভবন এই তিন ভবনেরই ছাত্রী ছিলেন তিনি। শিল্পী কেবল তুলিতে নয়, তাঁর শিল্পীত্ব ছিল কন্ঠেও। আর সব শেষে রয়েছেন বাণী প্যাটেল। গৌরী ভঞ্জের সুযোগ্যা কন্যা ছিলেন বাণী প্যাটেল। দাদু নন্দলাল বসুর সান্নিধ্য ছিল তাঁর পরম পাওয়া। মাত্র ২১ বছর বয়সেই তিনি এই কাজের দায়িত্ব পান। এ কারণে ২০১৮ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর তরফে তৈরি হয় এক অডিও ডকুমেন্টারি। ৮৯ বছর বয়সী বাণীর একটি সাক্ষাৎকার দেখানো হয় এই ডকুমেন্টারিতে। সংবিধানে কাজের ক্ষেত্রে এটিই ছিল তাঁর একমাত্র প্রামাণ্য দলিল।
Discussion about this post