“ভাবি আমার মুখ দেখাব, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে..” মার্কেটিংয়ের যুগে বিজ্ঞাপনের আঁচড় থেকে বাদ যায়নি শিক্ষাক্ষেত্রও। লকডাউন থাকাকালীন দেশে মাধ্যমিক স্তরের ৭০% শিক্ষার্থী পঠন পাঠন থেকে ছিল সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন। সেই অবস্থাতে দাঁড়িয়েও গুঞ্জন চলছে শিক্ষাক্ষেত্র বেসরকারীকরণের। নাহ্, ধোঁয়াশার মাঝেও ছাত্রছাত্রীদের পথ দেখাবে নতুন অ্যাপ ‘ক্লাসরুট’!
টাকা আর ভাষার বেড়াজালে থেমে যায় অনেক ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন। প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে এগিয়ে যায় কেউ, কেউ আবার হারিয়ে যায় প্রতিযোগিতার ময়দানে। ক্লাসরুট অ্যাপ নির্মাতা অভিষেক বিশ্বাস নিজের জীবনেও সাক্ষী থেকেছেন এমন অনেক ঘটনার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াকালীন নিজেও মুখোমুখি হয়েছিলেন আর্থিক অনটনের। সুতরাং ভেবে আর কাজ নেই, মাঠে নেমে এবার সরাসরি কাজ করা প্রয়োজন। ব্যস, ২০২০তে শুরু হয় ক্লাসরুটের খসড়া তৈরির কাজ। কুয়েতে ছেড়ে এসেছেন মোটা মাইনের চাকরি। নাকচ করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টারে এমবিএ পড়ার সুযোগ। লক্ষ্য একটিই, বাংলার ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানো। লক্ষ্যে সাথে পেয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের। তাদের মধ্যে একজন হলেন কৃষ্টি। যিনি ক্লাসরুটের সহ-নির্মাতা। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির চাকরি ছেড়ে হাত লাগিয়েছেন এই কাজে। এক থেকে বর্তমানে তাঁর দলের সদস্য সংখ্যা তিরিশ! অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ২০২২-এ!
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে পরীক্ষার আগেই তাদের মুঠোয় হাজির হচ্ছে ক্লাসরুট। এই অ্যাপে পড়াশোনার সমস্ত সুযোগ সুবিধে মিলবে বাংলা ভাষাতেই। ক্লাসরুট পথ দেখাবে সায়েন্স-আর্টস্-কমার্স উচ্চমাধ্যমিকের যেকোনো বিভাগের ছাত্রছাত্রীদেরই। স্কুল পাঠক্রমের যেকোনো বিষয়ে সাহায্য পাওয়া যাবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত। শিক্ষার্থীর যেকোনো বিষয়ে কোনোরকম জিজ্ঞাস্য থাকলে সবসময়ই হাতের মুঠোয় মজুত ক্লাসরুট। নির্মাতারা মাথায় রেখেছেন ছাত্রছাত্রীদের মানসিক দিকটিও। শিক্ষার্থীরা যাতে এখানে একসাথে পড়তে পারে, সেই বন্দোবস্ত ও করা আছে অ্যাপে।
তবে এই অ্যাপ কতটা আলাদা বাকি অ্যাপদের থেকে? অভিষেক জানালেন, ”পড়াশোনার ফেসবুক হতে চলেছে ক্লাসরুট! অন্যান্য নামী দামী অ্যাপে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজন হয় মোটা টাকার। ফলে পিছিয়ে আসে অনেক ছাত্রছাত্রীই। ক্লাসরুট এই দিক দিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায় না কোনোভাবেই। তাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাংলা ভাষাতেই এই অ্যাপে পড়াশোনা চালাতে পারবে শিক্ষার্থীরা। সবথেকে উল্লেখযোগ্য, এখানে পড়ুয়াদের মুখোমুখি হতে হবেনা অযাচিত বিজ্ঞাপনের। বর্তমানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিষয়বস্তু মজুত থাকলেও ক্লাসরুট খুব শীঘ্রই পথ দেখাবে চাকরির পরীক্ষার্থীদেরও। শুধুমাত্র বাংলা নয়, এই অ্যাপ হাজির হবে অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও। আর এখানেই হয়তো আলাদা ক্লাসরুট।” অভিষেকের প্রশ্ন একটিই, “আমেরিকা পারলে, ব্রিটেন পারলে বাংলা পারবে না কেন?”
Discussion about this post