চলতে থাকা বহু ঐতিহ্যই বুঝিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব আজও বর্তমান। তেমনি শান্তিপুরের অস্তিত্ব বেঁচে আছে সেখানকার শাড়ির ঐতিহ্যের মধ্যে দিয়ে। হয়তো শুনে থাকবেন, নদিয়া জেলার শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ির কথা। সূক্ষ্ম সুতোর কাজের হাতে বোনা এ শাড়ির সময়কাল বেশ পুরনো।
শ্রী অদ্বৈত আচার্যের অদ্বৈতমঙ্গলে শান্তিপুরের তাঁত হস্ত শিল্পের কথা লিখিত আছে বলে জানা যায়। সে প্রায় ১৪৬০-১৫৫৮ সালের কথা। গৌড়ের রাজা গণেশ দানু সাধনদেবের সময়ে শান্তিপুরে প্রথম শাড়ি বোনার সূচনা। মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের উপদেশে বাংলাদেশের একদল তাঁতি বাস করতে শুরু করে শান্তিপুরে। সঙ্গে চলতে থাকে তাদের পেশা, তাঁত বোনা। রাজা রুদ্র দেব রায়ের আমলে শুরু হয় বাণিজ্যিক ভাবে তাঁত বোনা। তবে বাংলাদেশ থেকে এই তাঁতিদের আসার পর থেকেই শাড়ির বাজার চলতে থাকে রমরমিয়ে।
এই তাঁতের শাড়ির বিশেষত্ব হচ্ছে এর পাড়। শাড়ির পাড় জুড়ে থাকে বিভিন্ন নকশা। ফুল, পাখি ইত্যাদি ছাড়াও ফুটে ওঠে পৌরাণিক কাহিনী। তবে নকশার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো, গঙ্গা যমুনা, চাঁদমালা, ভোমরা সাথে আরও অনেককিছু। নকশাগুলির বর্ননাও বেশ অন্যরকম। যেমন, গঙ্গা যমুনা – এই ধরনের পাড়ের দু’দিকে দুটি ভিন্ন রঙ এর পাড় দেখা যায়। ভোমরা – মৌমাছি থেকেই এরূপ নামকরণ। এই পাড়ে তুঁতে, কালো, লাল এবং চকোলেট রঙ এর আধিক্য দেখা যায়। চান্দমালা – এই ধরনের পাড়ে গোলাকার সোনালী বর্নের নক্সা দেখা যায়। এই পাড়ের নামকরণ চাঁদ থেকেই। আর গোটা শাড়ি জুড়ে থাকে ছোটো ছোটো বুটি। এই শাড়ি ভাঁজ করার বিশেষ পদ্ধতি গুটি ভাঁজ নামেই পরিচিত।
ব্যবসা ক্ষেত্রে দু’ধরনের শ্রেণী রয়েছে তাঁতিদের মধ্যে। স্বাধীন এবং পরাধীন তাঁতি। ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বাধীন তাঁতিরা কারোর ওপর নির্ভর করেন না। নিজস্ব পুঁজি দিয়েই চালিয়ে যান নিজের ব্যবসা। অন্যদিকে পরাধীন তাঁতিরা মহাজনদের ওপর নির্ভর করে থাকেন। আর সেই সুযোগে মহাজনরা ইচ্ছেমতো তাদের শোষণ করতে থাকে। তবে বর্তমানে মেশিনে কাজ চলার সুবাদে তাঁতিদের অন্ন জোটা দায় হয়ে গেছে। আর মহাজনদের ওপর নির্ভরযোগ্য হবার ফলে বাজার চলে তাদের মতেই। এতে আয় নেই বাংলার তাঁতিদের। তবে পেটে টান ধরলেও বাংলার তাঁত শিল্প বেঁচে আছে তাদেরই হাত ধরে। বাংলা যদি লাভের মুখ দেখে তাহলে তাঁত ও তাঁতি দুই-ই বাঁচবে।
Discussion about this post