পোস্টার হোক বা পেপারের হেডলাইনের কোনো শব্দ। ধার করতে হলে প্রথম নাম রবীন্দ্রনাথ। তার কথা কোট করে চলে আসছে বহুযুগ ধরে। তবে জানেন কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে কোনোদিন কোনো বিজ্ঞাপন লিখেছেন কিনা? তার কথা তিনি স্বয়ং দিয়েছেন কিনা কোনো কোম্পানির কাছে? বিজ্ঞাপনের কাজ করেছিলেন কবিগুরু, এমনটাই জানা গিয়েছে। শোনা যায়, বোর্ন ভিটার বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন তিনি। ব্যবহার করা হয়েছিল তাঁর নাম। এ বিজ্ঞাপনে তিনি স্বহস্তে লিখেছিলেন, “বোর্ন-ভিটা সেবনে উপকার পাইয়াছি।” তৎকালীন সময়ে তাঁর নিজের জন্য এবং শান্তিনিকেতনের জন্যও তিনি এমন অনেক বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন।
সেই সময়ের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্রনাথকে ব্যাপক হারে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা শুরু করেছিল। তেমনই এক উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপন, পাগলের মহৌষধ। এস সি রায় এন্ড কোং এর ড. উমেশচন্দ্র রায়ের কথিত পাগলের মহৌষধের বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেখানে কবিগুরু লিখেছিলেন, “আমি ইহার উপকারিতা বহুকাল যাবৎ জ্ঞাত আছি।” এছাড়াও ‘জলযোগে’ তার লেখা বিজ্ঞাপন ‘জলযোগ’কে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল। ওই বিজ্ঞাপনে তিনি লিখেছিলেন, “জলযোগের বানানো মিষ্টান্ন আমি চেখে দেখেছি। এটা আমাকে তৃপ্তি দিয়েছে। এর আলাদা স্বাদ আছে।” এরপরই ‘জলযোগ’ মিষ্টির দুনিয়ায় আলাদা জায়গা করে নেয়।
পূর্ব রেলওয়েতে ব্যবহার করা হয় তাঁর হঠাৎ দেখা কবিতার দু লাইন। ‘রেল গাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবিনি সম্ভব হবে কোনোদিন…’ । এছাড়াও কবি ‘কে এল এম রয়াল ডাচ’ এয়ারলাইন্সের জন্য বিজ্ঞাপন লিখেছিলেন। যার ফল স্বরূপ রয়াল ডাচ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বিশ্বভারতী পত্রিকায় ‘গুরুদেবের বিমান যাত্রা’ নামে সেই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। বিভিন্ন নথি ও তৎকালীন সংবাদপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৮৯ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনেই রবীন্দ্রনাথ অংশ নিয়েছিলেন। কখনও মডেল, কখনও তাঁর লেখা এক-দুই লাইন বা কখনও বা প্রশংসা বাক্য! সবই শোভা পেয়েছে নানা বিচিত্র বিজ্ঞাপনে।
Discussion about this post