ইতিহাসের মহানায়কেরাই মানব সভ্যতার প্রতিটি পরতে পরতে কল্যাণের বীজ বুনে যেতে পারেন। চলে গেল ৫জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রকৃতি রক্ষায় করেছিলেন অকৃত্রিম ত্যাগ। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশের প্রতি যে ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়েছেন তার ঋণ কোনও দিনই শোধ হবে না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৮ সালের ১৪ জুলাই শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বনমহোৎসবের আয়োজন করেছিলেন। মানুষকে আরও বেশি পরিবেশ সচেতন ও বন সৃজনে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রতি বছর তিনি বৃক্ষরোপণ উৎসব পালন করতেন। রবীন্দ্রনাথ জামাতা নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী এবং পুত্র রথীন্দ্রনাথকে বিদেশে পাঠান পরিবেশ ও কৃষিবিদ্যায় আধুনিক শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে।
যে যুগে সন্তানদের আইসিএস বা ব্যারিস্টার বানানো ধনী বাঙালি পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। ১৯১৬ সালে জাপান যাওয়ার সময় সমুদ্রপথে তেল নিঃসরণের বিষয়টি দেখে তিনিই প্রথম পরিবেশের ওপর মানুষের প্রভাব নিয়ে চিন্তান্বিত হন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বহু লেখনিতে এ বিষয় তুলে ধরলে সারা বিশ্বের পরিবেশবাদীরা সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সোচ্চার হয়। পরিবেশে কার্বন নিঃসরণ, পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ মানবজাতির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। আমরা প্রতিনিয়তই হা-পিত্যেশ করে থাকি আমাদের নগর জীবন নিয়ে। যে উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ আগেই করে বলেছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর।’
এবার আসছি বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের রাজধানী ‘ঢাকার ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দুই কোটি মানুষের বিশুদ্ধ অক্সিজেনের অন্যতম উৎস এ দুটি উদ্যান। ১৯৭২ সালের পূর্বে সেখানে ঘোড়দৌড়ের মাধ্যমে জুয়ার আসর বসতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করে সেখানে নিজ হাতে সারি সারি নারকেল এবং নাগেশ্বরের বাগান করেছিলেন। আজ যার সুফল পাচ্ছে ঢাকাবাসী। বঙ্গবন্ধুর জন্মভিটা বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় বসত বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে রোপণ করা হিজল, বট, নারকেল গাছগুলো এখনও তার স্মৃতি বহন করে। বঙ্গবন্ধুর পরিবেশ ও প্রকৃতি প্রেম তার নিজ হাতে লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সালের কারাস্মৃতি থেকে জানা যায়।
জেলখানার বাগান ও গাছপালার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এক ধরনের অদ্ভুত ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল। জেলখানায় অবাধে প্রবেশ করা পশুপাখি তার সাথী হয়ে গিয়েছিল। এক জোড়া হলুদ পাখির কথা কী সুন্দরভাবে তার লেখনীতে ফুটে উঠেছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়। কারাগারের রোজনামচার (পৃষ্ঠা -১৬৬) ১৯৬৬ সালের ১৭ জুলাইয়ের (রোববার) ঘটনায় তিনি আরও লিখেছেন, ‘বাদলা ঘাসগুলি আমার দুর্বার বাগানটা নষ্ট করে দিতেছে। কত যে তুলে ফেললাম। তুলেও শেষ করতে পারছি না।’ জেলের মধ্যে বন্দি থেকেও তিনি প্রকৃতি-পরিবেশকে ভালোবেসেছেন। এই কারণেই বঙ্গভূমির বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম আজীবন বাংলার আকাশ, বাতাস, সবুজ প্রকৃতির মাঝে আজীবন ধ্বনিত হয়ে থাকবে।
Discussion about this post