“পুষ্পবনে পুষ্প নাহি, আছে অন্তরে।” কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতটা সাবলীল ভাবে কথাটা বলেছেন তাইনা? যার অর্থ ফুলের বাগানে ফুল নেই, আছে আমাদের মনে। এই পরিচিত প্রিয় রবীন্দ্র সঙ্গীতটির ইতিহাস জানতে গিয়ে অনেক কিছু জানা যায়। কবিগুরু এই গানটি লিখেছিলেন ১৪ আশ্বিন, ১৩০২ বঙ্গাব্দে। বর্তমান বাংলাদেশের শিলাইদহে অবস্থিত কুঠিবাড়ি ওরফে ‘টেগর লজ’ এ বসে। যা বানিয়েছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এই ‘টেগোর লজ’কে কেন্দ্র করেই একসময়ে ‘টেগোর এ্যান্ড কোং- এর ব্যবসার শুরু হয়েছিল, কবিগুরু নতুন ভাবে সেই ব্যবসাকে আরও বাড়ানোর দায়িত্ব নেন। কবিগুরুর এই কাজের প্রধান সঙ্গী ছিলেন তাঁর দুই ভাইপো সুরেন্দ্রনাথ ও বলেন্দ্রনাথ। ‘শিলাইদহ ও রবীন্দ্রনাথ’ (১৩৮০) বইয়ের লেখক শচীন্দ্রনাথ অধিকারী এ বিষয়ে জানিয়েছেন; এই সময় মফস্বল জমিদারি থেকে ভূষো মাল আর পাট কিনে বাঁধাইযের ব্যবসা চালাবার জন্য শিলাইদহে ঠাকুর কোম্পানী প্রতিষ্ঠা হয়। যা পরিচালনার জন্য কবিগুরু যখন শিলাইদহে যেতেন। এই কুঠিবাড়ি ছিল তাঁর বিশ্রামের অন্যতম জায়গা। এখানে থাকাকালীন কবিগুরুর সাথে দেখা করতে এসেছেন জগদীশ চন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী সহ আরো অনেকে। জানা যায়, মাঘ ১৩২৮ বঙ্গাব্দে কবিগুরু শেষবারের মতো শিলাইদহে আসেন। কিন্তু তাঁর বহু দিনের বিশ্রাম ও কর্মস্থল ‘টেগোর লজে’ শেষবার যেতে পারেননি।
রবীন্দ্র স্মৃতি বুকে নিয়ে থাকা ‘টেগোর লজ’ এখন নতুনভাবে সেজে উঠেছে। দেশভাগের পর বাকি খাজনার দায়ে নিলাম হয়ে যায় এই ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ টি। পুনরুদ্ধারের বিচ্ছিন্ন চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি নানা কারণে। অনেক পরে কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে বাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আর এখন কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে ‘টেগোর লজ’ রবীন্দ্র জাদুঘর সংগ্রহশালা হয়ে উঠেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যের আকাশে আরো একটি নক্ষত্র যোগ হয়েছে।
প্রতিবেদক রেফুল করিম, সম্পাদনা করেছেন কুনাল বিশ্বাস
Discussion about this post