সুস্থ এক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন আগেই। বিপদে-আপদে বা দৈনন্দিন প্রয়োজনে মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতা করা, তাদের নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। সম্প্রতি আফমান-পরবর্তী সময়েও সাধারণ মানুষের সাহায্যে সর্বদা এগিয়ে এসেছেন তাঁরা। তারই স্বীকৃতি মিলল এবার এবং তা খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে৷ বারুইপুরের সমাজসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নসন্ধান’ এবার ডানা মেলল আরও নতুন স্বপ্নের খোঁজে।
লকডাউনের প্রায় শুরু থেকেই বারুইপুরের এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এলাকার বহু প্রান্তিক ছাত্রছাত্রী এবং শতাধিক অসহায় পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই মাসিক ধারাবাহিক সহায়তা প্রদানের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে মোট পাঁচটি মাসিক পর্যায়ে, মার্চ থেকে জুলাই। চাল, ডাল, তেল, আলু, সোয়াবিন, ডিম, চিনি, স্যানিটাইজার সহ প্রয়োজনের ভিত্তিতে ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং বেবিফুডও রয়েছে সেই সাহায্যের তালিকায়। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে ব্যবস্থা করা হয়েছে অনলাইন ক্লাসেরও। এমনকি তাদের ফোনের রিচার্জও করে দেওয়া হয়। অনলাইনে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্ত করা থেকে শুরু করে তাদের নিয়ে ভার্চুয়াল রবীন্দ্র জয়ন্তী পালন। সব রকম উদ্যোগই নিয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সারা রাজ্য। সেই ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে ত্রিপল, টিন, অ্যাসবেস্টস ছাড়াও আরও নানা প্রয়োজনীয় সামগ্রীও সাহায্য হিসাবে দান করা হয়েছে স্বপ্নসন্ধানের তরফে। এই দুই উদ্যোগে জেলা, রাজ্য এবং দেশের সঙ্গে স্বপ্নসন্ধানের বহু প্রবাসী শুভাকাঙ্ক্ষীরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সামিল হয়েছিলেন। করোনা ও আমফানের প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে স্বতঃস্ফূর্ত স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরও আয়োজিত হয় সংস্থার পক্ষ থেকে। জরুরী প্রয়োজনে থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু ও মানুষজনের সাহায্যে সরাসরি ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে রক্তদান করে এসেছেন স্বপ্নসন্ধানের সেনানীরা। প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের পরিবারগুলির আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠনের জন্য শুরু হয়েছে জৈব পদ্ধতিতে আনন্দচাষ। বিশিষ্ট সমাজতত্ত্ববিদ ও কৃষি বিশেষজ্ঞ পথিক বসুর তত্ত্বাবধানে এবং ‘আপনজন’ যৌথ সমবায়ের সহযোগিতায় স্বপ্নসন্ধানের এই প্রয়াসে শুধু শাকসব্জী উৎপাদনই নয়, রয়েছে হাস-মুরগী পালন এবং মাছচাষও। গোবর, কচুরিপানা ইত্যাদির সাহায্যে জৈব সার উৎপাদনের কাজও শুরু হয়েছে। এলাকায় কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিকের অভাবী, মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার দায়িত্ব তুলে নেওয়ার অভিপ্রায়ে শুরু করা হয়েছে ‘স্বপ্ন মেধাবৃত্তি-২০২০’। এই প্রকল্পে বিগত বছরগুলির মত এবছরেও নতুন ১৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে স্বপ্নসন্ধান।
এক দিকে কোভিডের বিরুদ্ধে বিধি মেনে চলেছে লড়াই সঙ্গে সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও জীবন, জীবিকার পুনর্গঠনেও সামিল হয়েছে স্বপ্নসন্ধান। এই সমগ্র উদ্যোগের প্রেক্ষিতেই মিলেছে স্বীকৃতি লাভ। প্রথমেই দক্ষিণ ২৪ পরগণা প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, আনন্দবাহারের কর্ণধার কৃষ্ণেন্দু দত্ত তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বপ্নসন্ধানের সমগ্র কাজের স্বীকৃতি হিসাবে একটি সম্মাননা জ্ঞাপন করেন। মূলতঃ তিনিই এরপর কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার দফতরকে অবহিত করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পক্ষ থেকে এরপর স্বপ্নসন্ধানের মূল কারিগর সুমিত মন্ডলের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। এরপরই মেলে সেই স্বীকৃতি। ‘ডেইলি নিউজ রিল’-এর সঙ্গে কথোপকথনে সুমিত বাবু জানান, “এটি স্বপ্নসন্ধানের সম্পাদক সুমিত মন্ডলের কোনো একক স্বীকৃতি নয় বরং এই স্বীকৃতি সামগ্রিক অর্থেই স্বপ্নসন্ধান তথা স্বপ্নসন্ধানের অগনিত স্বপ্নসন্ধানী, স্বপ্নসেনা ও শুভানুধ্যায়ীদের ধারাবাহিক, নিঃস্বার্থ কাজের স্বীকৃতি। যে কোনো স্বীকৃতিই গর্বের ও আনন্দের। কিন্তু সেটির সঙ্গে দায়িত্বও অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমি বা সামগ্রিকভাবে স্বপ্নসন্ধান পরিবার যেন আরও সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠভাবে করোনাজনিত এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সমাজের প্রান্তিক, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি।” আগামী দিনেও ঠিক এভাবেই সুমিত বাবু তথা স্বপ্নসন্ধানের কাজ যেন আকাশ ছোঁয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে, এ আশাতেই নতুন স্বপ্নে বিভোর এখন তাঁরা। তাদের এই অভিনব প্রয়াসকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় কী!
Discussion about this post