প্রতিবেদক – সৌরভ প্রকৃতিবাদী
বাঁকুড়ার মুকুটের মনি শুশুনিয়া দাউদাউ আগুনে জ্বলছিল গতকাল সন্ধ্যে থেকেই। মাঝরাতে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গিয়েছে বাঁকুড়া শহর থেকেও। গত বছরও আগুন লেগেছিলো শুশুনিয়ায়। তবে তার বিস্তার এতো বিশাল ছিলো না। প্রতি বছরই জঙ্গলমহল জুড়ে এই ভয়ঙ্কর খেলা চলে। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর রেঞ্জে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। বিষ্ণুপুর ফরেস্ট রেঞ্জে তাই মজুদ আছে ব্লোয়ার, হোস ইত্যাদি আগুন নেভানোর সরঞ্জাম। জেলার প্রান্তে মুকুটমণিপুর, খাতড়্ ঝিলমিলি অঞ্চলে এ বছরও আগুন প্রতিরোধী প্রচার চলেছে জোরকদমে। তবু কয়েকদিন আগেই বাঁকুড়ার বিখ্যাত ১২ মাইল জঙ্গল পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে আগুনে। এবার সেই তালিকায় নাম লেখালো শুশুনিয়াও।
জঙ্গলে আগুন লাগানোর খেলায় পেট ফুলে ওঠে কাঠ মাফিয়াদের। যদিও স্থানীয় গরিব মানুষের অভাবের সুযোগ নিয়ে এই মাফিয়ারা তাদেরই ব্যবহার করে আগুন লাগাতে। প্রতি বছরই কালবৈশাখীর ঠিক আগে আগে অর্থাৎ চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি এই আগুন লাগায় মাফিয়ারা। যাতে কালবৈশাখী ঝড়ে উপড়ে পড়ে অগ্নিদগ্ধ গাছগুলি অথবা উপড়ে পড়ার সম্ভাবনার অজুহাতে কেটে নেওয়া যায় বিনা বাধায়। জঙ্গলের আগুন চিরু ঘাস পুড়িয়ে দিয়ে সংগ্রহকারীদের রুজি রোজগারে থাবা বসায়, শাল পাতা সংগ্রহের রোজগার পন্ড করে। সাপ, বড়ো গিরগিটি, নেউল, সঁজারু, প্যাঙ্গোলিন বা সূর্যমুখি, শেয়াল, খরগোস এরা কাঠকয়লা হয়ে পড়ে থাকে পুড়ে যাওয়া জঙ্গলে। পুড়ে যায় যে কোন জঙ্গুলে বাস্তুতন্ত্রের জান আন্ডারগ্রোথ গুল্ম লতা। এই গুল্মলতায় ডিম দেয় কীটপতঙ্গ। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম জন্মের আগেই ঝলসে যায়। আর খাদ্য শৃঙ্খলে গুল্ম লতা এবং তাতে আশ্রয় নেওয়া পতঙ্গ কীটের শূণ্যস্থান কয়েকদিনের মধ্যেই অনাহারে মেরে ফেলে বেঁচে যাওয়া প্রাণীকুলকে।
শুশুনিয়ায় আগুন জ্বলতে দেখে প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থী হন বেশকিছু প্রকৃতি-প্রেমী যুবক। কিন্তু সাহায্য আসতে আজ বেলা গড়িয়ে গিয়েছে। এই অঞ্চলের জঙ্গল প্রশাসনের কাছে ব্লোয়ার নেই। তাই স্থানীয় মানুষের মিলিত প্রচেষ্টায় চলেছে শুকনো পাতা ঝাঁট দিয়ে আগুন শৃঙ্খলা ভাঙ্গার কাজ। তবে সে সবই পাহাড়ের নিচের দিকে। পাহাড়ের ওপরের দিকে অনেকটাই ঝলসে গিয়েছে। পাহাড়ের মাথায় একটুকরো সমতল ভূমি রয়েছে। সেই সবুজ ঘেরা সমতলও হয়তো আগুনে ঝলসে ধুসর হয়ে গিয়েছে। ‘গ্রিন প্লাট্যু’ নামের প্রকৃতি প্রেমী সংগঠনের সদস্যরা আগুন নেভানোর যে চেষ্টা করেছেন তা কুর্নিশ যোগ্য হলেও যথেষ্ট ছিল না। শুশুনিয়া পর্যটক এবং পিকনিক পার্টির অত্যাচারে মুমুর্ষু হয়েই ছিলো। কাল সন্ধ্যে থেকে বইতে থাকা বেগবান বাতাস আগুনকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলেছে বলেই জানাচ্ছেন প্রকৃতি কর্মীরা। খবর আছে, অযোধ্যা পাহাড়েও একই ভাবে আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কুচক্রীরা। যদিও সেখানে দল বেঁধে স্থানীয় অধিবাসীরা টহল দিচ্ছেন। না এখানেও প্রশাসনের কোন সদর্থক ভূমিকা এখনো দেখা যায়নি। সেখানেও ‘প্রকৃতি বাঁচাও, আদিবাসী বাঁচাও’ মঞ্চের সদস্যরা জঙ্গল রক্ষার কাজ করে যাচ্ছেন নিরলস ভাবে।
Discussion about this post