স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞের আগুনে নিজের প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন সতী। নিজের স্ত্রীর মৃত্যুতে রাগে, শোকে, অপমানে তান্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন মহাদেব। সেই সময় সৃষ্টি যেন রসাতলে যাওয়ার জোগাড়। তখন এই ধ্বংসের হাত থেকে ব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করেছিলেন ভগবান বিষ্ণু। বিষ্ণু সুদর্শন চক্রের চালনায় সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেন। সেই দেহাবশেষ ৫১টি ভাগে ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। দেবীর দেহাবশেষ যেখানে পড়েছিল, সেখানে গড়ে ওঠে এক একটি সতীপীঠ। এইসব সতীপীঠ আজও ভীষণ জাগ্রত বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা।
সেই রকমই একটি সতীপীঠ হল বর্তমান বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির। শোনা যায়, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে সতীর হাতের তালু পড়েছিল। বঙ্গদেশের হিন্দু রাজা প্রতাপাদিত্য মানুষের হাতের তালুর আকারের এক খন্ড পাথর অলৌকিকভাবে লাভ করেন। এরপর স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যশোরেশ্বরী মন্দির। এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন আনাড়ি নামের একজন ব্রাহ্মণ। তিনি এই মন্দিরে ১০০টি দরজা তৈরি করেন। তবে এই মন্দির বহুবছর রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার কারণে কিছুটা ভেঙে পড়েছিল।
পরবর্তীতে, রাজা লক্ষণ সেন এই মন্দির পুনরায় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে পাশে তৈরি করা হয় একটি নাট মন্দির। শোনা যায়, সেই সময় নাকি মায়ের নামে ২০০ বিঘা জমি দান করা হয়েছিল। যদিও পরে সেই জমি অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। মন্দিরের বেদীতে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের শুধুমাত্র মুখ দেখা যায়, গলার নিচের শ্রী হস্ত বা শ্রীচরণ, কোনটাই নজরে আসে না। দেবীর পুরো মূর্তি মখমলে আবৃত থাকে। গলায় থাকে রক্ত জবার মালা এবং বেশ কিছু অলঙ্কার। প্রতি শনি এবং মঙ্গলবার নিত্য পুজো হয় এই মন্দিরে।
তবে এই মন্দিরের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়টা হলো, এই মন্দিরে কিন্তু শুধুমাত্র হিন্দুরা নন, মানত করতে আসেন মুসলিম ভক্তরাও। এই অঞ্চলে এই মন্দিরটিকে অত্যন্ত জাগ্রত মন্দির হিসেবে মনে করা হয়। ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হলে, মন্দিরের বারান্দা থেকে জোড়া পায়রা উড়িয়ে তারা দেবীকে শ্রদ্ধা জানান। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত এমনকি অন্যান্য দেশ থেকেও প্রতিবছর প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। আর প্রতি বছর কালী পুজোর সময়, একেবারে নতুন করে সেজে ওঠেন মা।
Discussion about this post